চাহিদার তুলনায় ই-পাসপোর্ট সরবরাহ কম

আবারো এমআরপি সরঞ্জাম ক্রয়ে ফিরছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ই-পাসপোর্ট প্রকল্প অনুমোদন পায় ২০১৮ সালে। তবে পরিপূর্ণভাবে এটি চালু না হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আবারো মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এমআরপির জন্য ৪০ লাখ বুকলেট ও ৪০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) কেনা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গতকাল অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২১ জুন একনেক সভায় বাংলাদেশে ‘ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্প জি-টু-জি প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জার্মানির প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী তিন কোটি ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করবে জার্মানির এ প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট জার্মানিতে তৈরি হবে। বাকি ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বই মুদ্রণের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করবে তারা। এগুলো ছাপানো হবে দেশেই। তবে এ প্রকল্পের কাজের ধীরগতিতে অনেকে নতুন পাসপোর্ট হিসেবে এমআরপিকেই বেছে নিচ্ছেন। এছাড়া বিদেশী মিশনগুলোতে প্রবাসীদের চাহিদা মেটাতে পারছে না ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম।

তবে প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমানে ই-পাসপোর্টের সেবা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পরিমাণে প্রদান করা হচ্ছে। অধিকতর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এমআরপির জন্য সরঞ্জামাদি কেনার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। কোনোভাবেই ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম পিছিয়ে পড়েনি। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ১২ হাজার, চলতি সপ্তাহে ১৮ হাজারের বেশি পাসপোর্ট সরবরাহ করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ঘাটতি নেই। তবে কভিডের কারণে বৈদেশিক মিশনগুলোতে পুরোদমে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও আমরা তাদের সেবা প্রদানের জন্য শতভাগ প্রস্তুত। বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতে দেশগুলোতে নানা নিয়মনীতির কারণে পরিপূর্ণভাবে সেবা দেয়া যাচ্ছে না। এখন বৈদেশিক মিশনগুলোতে প্রতিদিন ৯-১০ হাজার আবেদন জমা পড়ছে। প্রবাসীদের পাসপোর্ট হালনাগাদ করতে বিকল্প সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির একটি প্রস্তাব ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির চারটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের অধীন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃক ৪০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বুকলেট এবং ৪০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিতের উদ্যোগের মধ্যে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়া বেছে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, ই-পাসপোর্ট পরিপূর্ণভাবে চালু না হওয়ার কারণে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সরঞ্জামাদি দ্রুত কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখনো এমআরপির চাহিদা রয়েছে। সেটি যথাযথভাবে নির্ণয় করেই এ সরঞ্জামাদি কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য দ্রুত কেনার জন্য ডিপিএম ক্রয় পদ্ধতি অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৪০ কোটি ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮৩৫ টাকা মূল্যের পাঁচটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ১২৭ কোটি ৮ লাখ ৮৮ হাজার ১০১ টাকা এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ ১৩ কোটি ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩৪ টাকা। তবে এর মধ্যে একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়নি। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক ‘ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডাটাবেজ (এনএইচডি)’ প্রকল্পে (তৃতীয় সংশোধিত) পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন বাবদ ১৩ কোটি ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৪০ টাকার প্রস্তাব ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব দেয়া হলে সেটি আগামী সভার জন্য রাখা হয়েছে। গতকাল সেটির অনুমোদন দেয়া হয়নি।

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো হলো বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) কর্তৃক ১৭ হাজার ৪০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর ক্রয়ে ৪৭ কোটি ১০ লাখ ৫ হাজার ৮২০ টাকা অনুমোদন। এছাড়া ৩৫ কিমি ১১ কেভি ও ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল ক্রয়ে ১৬ কোটি ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং পারটেক্স কেবল থেকে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ক্রয়ে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৩ হাজার ৮৯৫ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া হবিগঞ্জের শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ এবং বিশেষজ্ঞ সেবার জন্য ৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮৬ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন