মহামারীতে গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানে শ্লথগতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান গত জুলাইয়ে মারাত্মকভাবে কমেছে। গত মাসে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ১৮ লাখ, যা গত জুনে রেকর্ড ৪৮ লাখ কর্মসংস্থানের চেয়ে অনেক কম। খবর বিবিসি।

গত জুলাইয়ে বেকারত্ব হার ১০ দশমিক শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা এপ্রিলের ১৪ দশমিক শতাংশ বেকারত্ব হার থেকে কিছুটা কমেছে।

সর্বশেষ কর্মসংস্থান বেকারত্বের উপাত্তে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে আরো অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করা উচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের। অবশ্য অনেক অর্থনীতিবিদ যেমন শ্লথগতির আশঙ্কা করছিলেন, বর্তমানে ততটা শ্লথগতি সৃষ্টি হয়নি।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের চিফ ইউএস ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট ক্যাথি বোস্তজানচিক বলেন, যদিও কর্মসংস্থান হার আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে ভালো, তবে এখনই এটা স্পষ্ট বলা যাচ্ছে না যে সবকিছু ভালো চলছে। শ্রমবাজার পুনরুজ্জীবিত বা চাঙ্গা হতে আরো সময় অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ থেকে শুক্রবার প্রকাশিত উপাত্তে কর্মসংস্থানের উপাত্ত উঠে এসেছে। চলমান শাটডাউনে রেস্তোরাঁ, বার, রিটেইল আউটলেটসহ অনেক খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বর্তমানে নতুন করে যে নিযোগ হচ্ছে, তাকে কিছু অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর ইতিবাচক ফল হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে অর্থনৈতিক আরোগ্য লাভের প্রক্রিয়াটি আরো দীর্ঘ বলে মনে করেন তারা।   

ওয়েলস ফার্গোর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সারাহ হাউস বলেন, অর্থনীতি ধীরে ধীরে চালু হওয়ার প্রারম্ভিক প্রভাব দেখা গেল কর্মসংস্থানের উপাত্তে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারী কোন দিকে এগোয়, তার ওপর নির্ভর করবে এর গতিবিধি।

চলতি বছরে কর্মসংস্থানে যে প্রভাব পড়েছেতা সর্বশেষ আর্থিক মন্দার চেয়ে ভয়াবহ। গত ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছে। বেকারত্ব হার দাঁড়িয়েছে দশমিক শতাংশ, যা ৫০ বছরের সর্বোচ্চ। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি গত ৭০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংকোচনের মধ্য দিয়ে গেছে।

গত জুলাইয়ে বেকারত্ব হার যেখানে ১০ দশমিক শতাংশে দাঁড়িয়েছে, সেখানে ২০০৭-০৯ সালের আর্থিক সংকটের সময়ে বেকারত্ব হার ছিল ১০ শতাংশ। চলতি সপ্তাহে ১২ লাখ আমেরিকান বেকারত্ব সুবিধার জন্য আবেদন করেছে। প্রায় কোটি ১০ লাখ আমেরিকান কয়েক মাস ধরেই সুবিধা গ্রহণ করে আসছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে প্রতি পাঁচ আমেরিকানের মধ্যে একজন সুবিধা গ্রহণ করছে।

বামঘেঁষা ইকোনমিক পলিসি ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ হেইদি শিয়ারহোজ বলেন, গত জুলাইয়ে ১৮ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু আমাদের কর্মসংস্থান খাত মারাত্মক সংকটে রয়েছে।

গত মাসে নতুন কর্মসংস্থানে শ্লথগতির ফলে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি গভীর সংকটে রয়েছে। স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের জেরে ভোক্তাব্যয়ে প্রভাব পড়ছে।

সারাহ হাউস বলেন, এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে আরো কয়েক মাস মহামারীকালীন অর্থনীতির মধ্য দিয়ে যাবে। বর্তমানে চাকরি ছাঁটাইয়ের বিষয়টি অস্থায়ী থেকে স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এতে আমরা কভিড-১৯ মহামারীর সবচেয়ে কঠিন সময়ে দাঁড়িয়েছি।

মার্কিন আইনপ্রণেতারা আরো প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য বিতর্কে লিপ্ত রয়েছেন। ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা যেখানে ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি প্যাকেজের দাবি জানাচ্ছেন, সেখানে রিপাবলিকানরা ট্রিলিয়নের কাছাকাছি একটি প্যাকেজের ব্যাপারে প্রস্তাবনা দিয়েছেন।

ক্যাথি বোস্তজানচিক বলেন, বর্তমানে ডেমোক্র্যাটস রিপাবলিকানদের মধ্যে বিতর্ক খুবই খারাপ জায়গায় দাঁড়িয়েছে, যা আমরা আশা করিনি। পরিস্থিতি বর্তমানে এত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে উভয় পক্ষকেই আপস করতে হবে, যাতে বিলটি পাস হয়।   

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন