বিদেশগামী সব দেশের জন্য করোনা সনদ বাধ্যতামূলক নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশগামী সব যাত্রীর জন্য গত ২৩ জুলাই থেকে কভিড-১৯-এর নেগেটিভ সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক করেছিল সরকার। তবে নানা জটিলতায় সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গন্তব্য দেশের পক্ষ থেকে চাওয়া হলে তবেই শুধু সনদ নিতে হবে। এর বাইরে সনদ ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন বাংলাদেশীরা। গতকাল এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির সভাপতিত্বে করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য করণীয় বিষয়ে গতকাল জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য বর্তমানে করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক আছে। ব্যবস্থায় আংশিক সংশোধন করে যেসব দেশ যাত্রীদের জন্য করোনা নেগেটিভ সনদ চাইবে কেবল সেসব দেশের যাত্রীদের জন্য করোনা নেগেটিভ সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক হবে। তবে বিমানবন্দরে বিদেশগামী সব যাত্রীর সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করতে হবে, বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের করোনা পরীক্ষার জন্য সরকার অনুমোদিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছ থেকে প্রাপ্ত এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) থেকে প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে উপযুক্ততা যাচাই করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হবে। নির্বাচিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রয়োজনীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ সহায়তা প্রদান করার ব্যাপারে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগে সিলেট চট্টগ্রামে বিদেশগামী যাত্রীদের কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য ল্যাব প্রতিষ্ঠা এবং বিদেশফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। তিনি বলেন, করোনা সংকট মোকাবেলায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, ত্রাণসহায়তা, বিদেশ থেকে দেশে প্রত্যাবাসনে সহায়তা এবং রিইন্টিগ্রেশনে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন বাস্তবসম্মত সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মানব পাচার প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ আরো বেগবান করতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব . আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের সঞ্চালনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউস, বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের

প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল মাহফুজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

সভায় অন্যদের মাঝে আরো বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান প্রমুখ।

এর আগে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বিদেশগামী সব যাত্রীর কভিড-১৯ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। যা গত ২৩ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। বিদেশ গমনে কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ নিতে যাত্রীদের ১৬টি নির্ধারিত পিসিআর ল্যাব থেকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।  বিদেশ যাত্রীদের কভিড-১৯ পরীক্ষা সনদ প্রাপ্তির জন্য ল্যাবে গিয়ে নমুনা দেয়ার ক্ষেত্রে ৩৫০০ টাকা এবং বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহে ৪৫০০ টাকা ফি দিতে হচ্ছে।

কভিড-১৯ পরীক্ষায় বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য ১৬টি পিসিআর ল্যাব নির্ধারণ করেছে সরকার। বর্তমানে এসব ল্যাব থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু যাত্রীদের যাত্রার ৭২ ঘণ্টার আগে কোনো নমুনা সংগ্রহ করা হবে না এবং যাত্রার ২৪ ঘণ্টা আগের রিপোর্ট ডেলিভারি গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। নমুনা দেয়ার সময় পাসপোর্টসহ যাত্রীদের বিমান টিকিট পাসপোর্ট উপস্থাপন নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে।

তবে করোনা নেগেটিভ সনদ সংগ্রহ নিয়ে গত কয়েক দিনে নানান ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন বিদেশগামীরা। সময়মতো সনদ না পাওয়ায় অনেক প্রবাসী কর্মীর ফ্লাইট মিস হয়ে গেছে। শেষ হয়ে যাচ্ছে ভিসার মেয়াদ। এরই মধ্যে অনেক যাত্রী নমুনা দিয়ে সঠিক সময়ে করোনা সনদ না পাওয়ায় গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে পারেননি। তাতে গচ্চা গেছে যাত্রীদের টিকিটের অর্থ।

উল্লেখ্য, কভিড-১৯ পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ১৬টি পিসিআর ল্যাবের তালিকা রয়েছে। এগুলো হলো সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, বরিশালের শের--বাংলা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ ঢাকা, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ দিনাজপুর রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন