মহামারীতে প্রসারিত হচ্ছে ভার্চুয়াল হাসপাতাল সেবা

সাইদ শাহীন

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম। ফলে কভিড-১৯ মহামারীর সময় সরকারি হাসপাতালের সেবা যেমন অপ্রতুল, তেমনি সংকুচিত বেসরকারি হাসপাতালের কার্যক্রমও। অবস্থায় সাধারণ রোগীদের আশার আলো দেখাচ্ছে টেলিমেডিসিন বা ভার্চুয়াল হাসপাতাল সেবা।

বাংলাদেশেও সম্প্রতি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে টেলিমেডিসিন সেবা। দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের নিয়মিত কনসালট্যান্ট ভালো মানের চিকিৎসকদের মাধ্যমে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখন দেশের ৭০ শতাংশের বেশি বেসরকারি হাসপাতাল স্বল্প পরিসরে ধরনের স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখলেও সামনের দিনে তা আরো বাড়বে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম বিশেষায়িত হাসপাতাল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক . এএম শামীম বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, এরই মধ্যে ল্যাবএইড হাসপাতাল তাদের ৮০ জন কনসালট্যান্টকে দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। যেসব জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে কিন্তু দক্ষতায় যারা খুব বেশি ভালো, তারাই মূলত টেলিমেডিসিন সেবাটি দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালে এসেও সেবা নিতে পারছেন রোগীরা। করোনাকালে টেলিমেডিসিন বেশ সহায়ক হচ্ছে, বিধায় বেসরকারি হাসপাতালে সেবার বিস্তৃতিও বাড়ছে।

ভার্চুয়াল সেবার ক্ষেত্রে রোগীরা প্রথমে একটি নার্সকে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের লক্ষণগুলো জানায়। তারপর একজন উপস্থিত চিকিৎসক পূর্ণ সাক্ষাত্কারের জন্য গ্রহণ করেন। ক্ষুদ্রতর রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে দূরে থেকেও রোগীরা তাদের হূদস্পন্দন, শ্বাস গলা পরীক্ষা করতে পারেন। বাড়ি থেকে রক্ত পরীক্ষা করানো হচ্ছে। ফলে খুব সহজেই ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন রোগীরা।

ভারতীয় গবেষণা সংস্থা মার্কেটস অ্যান্ড মার্কেটসের তথ্যমতে, সারা বিশ্বে টেলিমেডিসিন সেবার বাজার চলতি বছরে আড়াই হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে। চলতি বছর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হবে ১৭ শতাংশ। আর ২০২৫ সালের মধ্যে টেলি স্বাস্থ্যসেবার বাজার ছাড়াবে হাজার ৫৬০ কোটি ডলার।

মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আইএইচএইচ হেলথকেয়ার গ্রুপ বিশ্বব্যাপী ৭৭টি হাসপাতাল পরিচালনা করে। গত মাসে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর অন্য ছয়টি দেশে অনলাইনে রোগী দেখার ব্যবস্থা চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। টেলিহেলথ স্টার্টআপের জন্য বড় অর্থায়ন করার তথ্যও দিয়েছেন আইএইচএইচ হেলথকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নির্বাহী অফিসার সিইও কেলভিন লোহ।

ব্যাংকক ডুসিত মেডিকেল সার্ভিসেস (বিডিএমএস) চলতি বছরের মার্চে অনলাইন পরিষেবাটি চালু করে। ওয়ান স্টপ স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন থেকে অ্যাক্সেস করার সুযোগ দিচ্ছে সামিটিভেজ ভার্চুয়াল হাসপাতাল। হাসপাতালের প্রায় ৩৮০ চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতেই নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী চলাকালে ভার্চুয়াল হাসপাতালের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

ভারতে টেলিহেলথ প্লাটফর্ম এমফাইন। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য স্টার্টআপ প্লাটফর্মে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা হচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে এমফাইনে সেবাপ্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়ছে। প্লাটফর্মটি এখন দিনে ১০ হাজার সেবা দিচ্ছে। মার্চের শুরুর দিক থেকে সংখ্যাটি চার গুণ বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসাদ কমপাল্লি বলেছেন, নতুন করে ৫০টি হাসপাতাল এমফাইনে ক্লায়েন্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩০০টি ক্লায়েন্ট সেবাটি নিচ্ছে। আরো অনেক হাসপাতাল এমফাইন নেটওয়ার্কে যোগ দিতে ইচ্ছুক। আগামী গ্রীষ্মের শেষে আশা করছি তালিকায় এক হাজার হাসপাতাল থাকবে।

বাংলাদেশের স্কয়ার হাসপাতালে গত মাস থেকেই সেবাটি চালু হয়েছে জানান হাসপাতালটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হেড অব মার্কেটিং ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল জামান।

তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, স্কয়ার হাসপাতালে সেবাটি চালু করার আগে আমরা নিজেদের প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ করে তুলেছি। ডাক্তার সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে যাতে পুরনো রোগীদের সব তথ্য সহজেই দেখতে পান সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখন প্রতিদিন ১৫ জন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। তবে প্রতিদিনই তা বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলেও আমরা সেবা ধরে রাখার চেষ্টা করব।

এশিয়ার দেশগুলোতে ভালো মানের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, রোগীরা দ্রুত সেবাগুলোতে অ্যাক্সেস করতে না পারা, জনপ্রতি ডাক্তারের বিপরীতে অধিক মানুষ থাকায় এক ধরনের বাধা ছিল স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে। তাই করোনাকালে ভার্চুয়াল সেবার দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশের ভালো মানের হাসপাতালগুলোর জন্য এটি একটি সুযোগ তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে যখন বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া বেশ দুষ্কর হচ্ছে। তাছাড়া এখন অনেক মাজারি ছোট মানের হাসপাতালে ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে সেবাটি আরো সম্প্রসারণ করা গেলে কিছুটা স্বস্তি পেতেন সেবাপ্রত্যাশীরা। দেশে বেশ কয়েকটি বড় বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়াও এখন প্রায় ৬৯টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। তারা চাইলেই সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় টেলিমেডিসিন সেবা পৌঁছে দিতে পারে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. সাগুফা আনোয়ার প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, মার্চ থেকেই আমরা অনলাইনে সেবা প্রদান শুরু করেছি। এখন প্রায় প্রতিদিন ৭০ জনের বেশি ডাক্তার নিয়মিতভাবে সেবা দিচ্ছেন। সেবাপ্রত্যাশীরা এখন ভালো মানের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চাইছে। সেখানে যদি সরাসরি হাসপাতালে না যাওয়ার প্রশ্ন আসে, তাহলে অবশ্যই এসব হাসপাতালে আসতে চাইবেন। এজন্য রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরাও চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন