ত্রাণ হিসেবে মসুর ডাল

রমজানে সরবরাহে সংকট হতে পারে মসুর ডালের

জেসমিন মলি

চলতি মাসে শুরু হতে যাওয়া রমজানের চাহিদা মেটানোর মতো মসুর ডালের পর্যাপ্ত মজুদ ছিল বাংলাদেশে। নভেল করোনাভাইরাসে কর্মহীন দরিদ্রদের সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে বিতরণ করা ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তায় মসুর ডাল দেয়া হচ্ছে। ফলে রমজানে পণ্যটির সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে মসুর ডালের দামের তুলনায় দেশের বাজারে দাম বেশি জানিয়ে ডালের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মসুর ডালের স্থানীয় চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি এবং স্থানীয় আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য পর্যালোচনা করে স্থানীয় বাজার স্থিতিশীল রাখার সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয় ট্যারিফ কমিশনের কাছে। কমিশন মসুর ডালের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গত সোমবার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মসুর ডালের চাহিদা প্রায় পাঁচ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মসুর ডালের উৎপাদন লাখ ৫২ হাজার টন। চলতি অর্থবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা লাখ ৮৭ হাজার টন। মূলত ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ মসুর ডাল উৎপাদনের মৌসুম। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ডালের সংরক্ষণ মিলিংকালে প্রক্রিয়াকরণে ক্ষতি হয় ১০ শতাংশ। সে হিসেবে গত অর্থবছর ডাল উৎপাদন হয় লাখ ২৭ হাজার টন। 

দেশের চাহিদার ৫৫ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১২ মাসে দেশে লাখ হাজার টন মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। 

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানি করা ডাল খোসাসহ আমদানি হয়, যা মিলিংকালে থেকে ১০ শতাংশ কমে যায়। সে হিসেবে এক বছরে আমদানি ডালের সরবরাহের পরিমাণ লাখ ৭৭ হাজার টন। তাতে আমদানি উৎপাদন মিলিয়ে লাখ হাজার টন হয়, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটার তুলনায় সামান্য বেশি। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশে মসুর ডালের মাসিক চাহিদা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টন। তবে রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে ৮০ হাজার টনে পৌঁছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় উৎপাদন মৌসুম মাত্র শেষ হওয়া আমদানির পরিমাণ স্বাভাবিক থাকায় সরবরাহ স্থিতিশীল থাকবে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা ত্রাণসামগ্রী হিসেবে মসুর ডাল সরবরাহ করায় সরবরাহে সাময়িক সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাই রমজান নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে ত্রাণ হিসেবে দেয়ার জন্য মসুর ডালের চাহিদা বাড়ায় সরবরাহের ক্ষেত্রে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। 

মসুর ডালের স্থানীয় আন্তর্জাতিক বাজারদর বিশ্লেষণও করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। তাতে বলা হচ্ছে, ২০১৯ সালের এপ্রিলের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি টন মসুর ডালের মূল্য ছিল ৪৪৬ মার্কিন ডলার। এখন দর বেড়ে হয়েছে ৫২০ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে মসুর ডালের দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশ। 

টিসিবির হিসাবে, গত সোমবার রাজধানীতে প্রতি কেজি মসুর ডালের দর ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আমদানি করা বড় দানার ডালের দাম ৭৫-৮০ টাকা এবং মাঝারি দানার ডাল ৯০-১০০ টাকা। গত মাসের তুলনায় দেশী মসুর ডালের দাম কেজিতে দশমিক ৩৩ শতাংশ, মাঝারি দানার ডাল দশমিক ১৩ শতাংশ বড় দানার ডাল দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে। দেশে গত বছরের তুলনায় দেশী মসুর ডালের দাম ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম ১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং বড় দানার মসুর ডালের দাম ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরে মসুর ডালের দাম ১৪ শতাংশ এক মাসে শতাংশ বেড়েছে। তাই দেশের বাজারে ডালের দাম বাড়ার কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধি। তবে স্থানীয় বাজারে এক বছরে দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে ১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন