ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

বিশ্ববাসীকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলা নভেল করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক এখনো বাজারে আসেনি। নেই সর্বজনস্বীকৃত কোনো ওষুধও। অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ করে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এরপর থেকেই চাহিদা বেড়েছে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফলের। এতে দামও বেড়েছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।

দেশের ফলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের বিআরটিসি ফলমণ্ডি। গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারটিতে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে আমদানীকৃত ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল মাল্টা কমলালেবুর দাম। এর আগে প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অস্বাভাবিক বেড়েছে লেবুর দামও। 

বর্তমানে বিআরটিসি ফলমণ্ডিতে পাইকারি পর্যায়ে মিসর থেকে আমদানীকৃত প্রতি কার্টন (১৫ কেজি) মাল্টা বিক্রি হচ্ছে হাজার ৬০০ থেকে হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে। সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগের দিন পর্যন্ত বাজারে একই মানের মাল্টা বিক্রি হয়েছে মাত্র হাজার ২০০ থেকে হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে। সেই হিসেবে প্রতি কার্টন মাল্টার দাম বেড়েছে কমপক্ষে ৪০০ টাকা। 

এদিকে গত দুই সপ্তাহ ধরে ভারত থেকে কমলা আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে বাজারে কমলা নেই বললেই চলে। বাজারে আগের আমদানি হওয়া প্রতি ক্যারেট (কমলার আকারের ওপর নির্ভর করে ২০-২৫ কেজি) কমলা বিক্রি হচ্ছে হাজার থেকে হাজার ২০০ টাকার মধ্যে, যা আগে হাজার ৫০০ থেকে হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো বলে জানা গেছে।  

তবে অন্যান্য আমদানীকৃত ফলের চেয়ে দাম কম বেড়েছে আপেলের। বর্তমানে বাজারে প্রতি কার্টন (২০ কেজি) আপেল বিক্রি হচ্ছে হাজার ৪০০ থেকে হাজার ৫০ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালোমানের (-ওয়ান ফুজি) প্রতি কার্টন আপেল বিক্রি হচ্ছে ২০০০-২০৫০ টাকার মধ্যে। মাঝারি মানের (পানি ফুজি) প্রতি কার্টন আপেল বিক্রি হচ্ছে হাজার ৪০০ থেকে হাজার ৫০০ টাকায়। 

ফল আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, নভেল করোনাভাইরাসের ফলে বিশ্বব্যাপী আমদানি-রফতানি চেইন ব্যাহত হচ্ছে। সময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে গত দু-তিন সপ্তাহ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের অরেঞ্জের (মাল্টা, কমলা) চাহিদা অতিরিক্ত বেড়েছে। 

আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় বাজারেও ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ আমদানীকৃত সব ফলের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে বলে দাবি করেছেন আমদানিকারকরা। 

ফল আমদানিকারক মেসার্স জারিফা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ জুনায়েদুল হক বলেন, এক মাস আগেও আন্তর্জাতিক বাজারে (মিসর) প্রতি কার্টন (১৫ কেজি) মাল্টা বিক্রি হয়েছে থেকে ডলারের মধ্যে। মাত্র দু-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে পণ্যটির দাম। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কার্টন মাল্টা ১৫-১৬ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা দেশীয় বাজারে পৌঁছা পর্যন্ত কার্টনপ্রতি খরচ হবে হাজার ৮০০ টাকার বেশি। সেই হিসেবে আগামীতে পণ্যটির দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আমদানিকারক। ওয়াসিম আবুল কালামসহ রেয়াজুদ্দিন বাজারের ফল বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজারের প্রভাবে খুচরা বাজারে ফলের দাম প্রচুর বেড়েছে। আগে প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হতো ৯০-১১০ টাকার মধ্যে। দুই সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় বেড়ে একই মাল্টা কেজিপ্রতি ১৩০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে প্রতি ডজন কমলা বিক্রি হতো ১৫০-১৮০ টাকায়, যা এখন ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সি-সমৃদ্ধ সব ফলের দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে জানান খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা। 

চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক খান বণিক বার্তাকে বলেন, করোনায় চাহিদা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক বাজারে অরেঞ্জ-জাতীয় ফলের বুকিং দর আগের যেকোনো রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ফলে দেশের বাজারে এসব ফলের দাম বেড়েছে। তাছাড়া গত কয়েক দিনে বন্ধের কারণে পণ্যের জট লেগে আছে। এতে আমদানি পণ্যের ডেলিভারি ব্যাহত হওয়ায় ফলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানীকৃত ফলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খালাসে অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ী নেতা। 

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি বছরের গত তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে অরেঞ্জ-জাতীয় ফল (মাল্টা, কমলা) আমদানি হয়েছে ৬৪ হাজার ১২৫ টন। গত বছর একই সময়ে অরেঞ্জ আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৭৮৫ টন। সেই হিসেবে গত বছরের চেয়ে এবার অরেঞ্জ আমদানি কমেছে প্রায় ১২ হাজার টন। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আপেল আমদানি হয়েছে লাখ ২৪ হাজার ৯৮ টন, যা গত বছর ছিল লাখ ৮৬ হাজার ৭২৫ টন। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন