খাদ্য সংকটে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে স্বল্পসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ইরাকে কঠোর নিষেধাজ্ঞায় বাগদাদের একটি পরিত্যক্ত ফুটপাতে মাস্ক গ্লাভস পরে দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্য বিতরণ করছে হাতে গোনা কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী। আবু হাসিম নামে ৫০-এর কোঠায় থাকা এমন এক স্বেচ্ছাসেবক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলছেন, আমরা সমাজের প্রতি মানবিক দায়িত্ব থেকেই এমনটা করছি। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের সবার এমনটা করা উচিত। খবর এএফপি।

ইরাকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে পর্যন্ত ৫৬ জন মারা গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন আট শতাধিক। কিন্তু অনেকেই সন্দেহ করছেন যে আসল সংখ্যাটি আরো বেশি হতে পারে। কারণ চার কোটি মানুষের দেশটির মাত্র কয়েক হাজার জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশব্যাপী লকডাউন, স্কুল বেশির ভাগ দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সরকার যদিও এখনো তাদের লাখ লাখ কর্মীকে বেতনাদি দিচ্ছে কিন্তু ইরাকের বেসরকারি খাতের জন্য কভিড-১৯ বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যদিও ইরাক দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উত্তোলনকারী, তবু ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ২০তম অবস্থানে রয়েছে দেশটি। একই সঙ্গে দেশটির প্রতি পাঁচজনের একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক।

সরকারের ওপর নির্ভর করে বসে থাকা যাবে না, বিষয়টি মাথায় রেখে আয়হীন মানুষের সহায়তায় একসঙ্গে কাজ করছে তরুণ সমাজকর্মী, সমাজের নেতারা স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা। অনুদান থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে মসুর ডাল, মটরশুঁটি, চাল চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করছেন তারা। 

প্রায় ৪৫০ পরিবারকে সহায়তাকারী মোস্তফা ঈসা নামে ৩১ বছর বয়সী ইরাকি শিয়া মুসলিম এএফপিকে বলেন, ধর্মীয় কর্তব্য মনে করেই তিনি সাহায্য করেছেন। ৯০-এর দশকে সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ১৯৯০-এর দশকে আমরা যে অবরোধের মধ্যে ছিলাম এটা এমন পরিস্থিতি নয়। ওই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যও সহজলভ্য ছিল না।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ঈসা বলেন, বর্তমানে বাগদাদে প্রচুর খাদ্য রয়েছে, তবে মানুষ তা কিনতে পারে না। আমরা এমন এক নির্মাণ শ্রমিককে সাহায্য করেছি যার বাসায় আটজন সদস্য। অথচ হঠাৎ করে তার আয় বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা আরেকজনকে চিনি যে তার  গ্যাসের ক্যানিস্টার বিক্রি করে খাবার কিনেছে। অন্য একজন তার মোবাইল ফোন বিক্রি করে দিয়েছে। একজন মহিলা তার পাড়া থেকে দূরে অন্য পাড়ার মসজিদে গিয়ে সাহায্যের আবেদন করছে, যাতে তার পাড়ার লোকজন তাকে চিনতে না পারে।

এক সরকারি কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, মে মাসের মাঝামাঝিতে দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই খাদ্য সংকটে পড়বে।

চাল, মাংস, গমসহ বেশির ভাগ প্রধান খাদ্যশস্য আমদানি করে ইরাক। কর্মকর্তারা বলছেন, ইরাকের যে হাজার কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে এক বছরের খাদ্যশস্য আমদানি করা সম্ভব। কিন্তু ইরাকের মনোনীত প্রধানমন্ত্রী আদনান জুরফি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, সরকারি খাতের কর্মীদের হয়তো বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে তার সরকারের।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন