করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প

ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হোক

করোনা পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে সংকুচিত হয়েছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। কমেছে অভ্যন্তরীণ কেনাবেচা। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, করোনা শুধু মানুষের জীবনের জন্যই নয়, অর্থনীতির জন্যও বড় হুমকি। করোনা-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে দেশের ক্ষুদ্র মাঝারি খাতে। একদিকে চলছে সম্ভাব্য মন্দা মোকাবেলার পথ খোঁজার চেষ্টা, আরেকদিকে করোনা বিস্তার রোধে পুরো দেশই কার্যত একটা লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যেই সামনে চলে এসেছে দেশের এসএমই বা ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প খাতে ধসের আশঙ্কা। সাধারণত স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ দুই ঈদের উৎসব কেন্দ্র করেই চলে এসএমই পণ্য বিক্রির প্রস্তুতি। কিন্তু করোনা মহামারীতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প খাতের উৎপাদন বিপণনের প্রস্তুতি। সংকট কতদিনে সমাধান হবে, তা কেউ বলতে পারছে না। অবস্থায় আপাতত বেকার হয়ে পড়েছে খাতে কর্মসংস্থান হওয়া ৭৩ লাখ মানুষ। এই বেকারত্ব দীর্ঘকালীন হতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সময় সরকারের বিশেষ সহযোগিতা না পেলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঝরে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ এসএমই শিল্প সংখ্যায় বিশ্বে এখন সপ্তম স্থানে রয়েছে। এখন দেশে এসএমই খাতে কর্মসংস্থানের পরিমাণ ৭৩ লাখ। এসব পরিসংখ্যান থেকে দেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান বোঝা গেলেও খাতের শিল্প উদ্যোক্তা শ্রমিকরা সবসময়ই ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। কেননা পুঁজি কম থাকায় তাদের টিকে থাকার সক্ষমতা কম। আর বড় ধরনের সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে খাতের উদ্যোক্তাদের দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিও থাকে বেশি। এভাবে উদ্যোক্তা দেউলিয়া বা কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে খাতের বিপুলসংখ্যক শ্রমিকও বেকারত্বের ঝুঁকিতে পড়ে যান। অনেক ক্ষেত্রে অদক্ষ কম দক্ষ এসব শ্রমিকের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানও কঠিন হয়ে পড়ে। 

সরকার রফতানিমুখী শিল্পের জন্য যে হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠনের কথা বলেছে, তার সুবিধা অনানুষ্ঠানিক খাত বা ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প পাবে না। বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক খাতেই ৮৬ শতাংশ শ্রমিক কাজ করেন। ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সবকিছু বন্ধ করে দেয়ার এক সপ্তাহ পার না হতেই দরিদ্র কর্মহীন মানুষের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। আয়ের অভাবে তাদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার কথা বলেছে। কিন্তু কাজটি কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা পরিষ্কার নয়।

এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, মার্চের মাঝামাঝি থেকে অনেক কারখানায়ই কারিগরদের ছুটি দেয়া হয়েছে, তাই উৎপাদনও বন্ধ। কিন্তু কর্মচারীর বেতন, শোরুম ভাড়া অন্যান্য খরচ বন্ধ হয়নি। এর বাইরে বড় অংকের ব্যাংক সুদ গুনতে হচ্ছে তাদের। অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেউলিয়া হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি এসব ব্যবসায় এমনিতেই বেচাকেনা মন্দা থাকে। এখন উৎসবগুলোয় বেচাকেনার মৌসুম সামনে থাকলেও উৎপাদন চালু রাখার যেমন উপায় নেই, তেমনি মৌসুমি উৎসবগুলো জমজমাট হবে কিনা, সেটাও অনিশ্চিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে বহুমাত্রিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন এসএমই উদ্যোক্তারা। অবস্থায় সরকারের উচিত দেশের সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা। না হলে এখন জিডিপিতে ২৫ শতাংশ অবদান রাখা এসএমই খাতকে সরকারের ঘোষিত লক্ষ্যানুসারে ২০৪১ সালের মধ্যে ২৮ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে এসএমই খাতে ধস নামলে এমনিতেই কর্মসংস্থানের সংকট থাকা অর্থনীতিতে নতুন করে লাখ লাখ বেকারের চাপ সামলানোও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। সরকার এসব ঝুঁকি বিবেচনা করে সময়োচিত বাস্তব পদক্ষেপ নেবে, সেটাই প্রত্যাশিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন