মরক্কোয় আবাসন খাতে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি

বণিক বার্তা ডেস্ক

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচার করা হয় চাকচিক্য বিজ্ঞাপন। প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় উচ্চাভিলাষী স্বপ্নের বাড়ির। কাঠ মার্বেলখচিত বাড়ির ছবি ছাপিয়ে বিলি করা হয় পোস্টার। গ্রাহক আকর্ষণে যা যা করার সবই করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে। আর এভাবেই গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে সাড়ে কোটি ডলারের বেশি অর্থ। বলা হচ্ছে, উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোর আবাসন খাতে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির কথা। দেশটির প্রায় এক হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। আলোচিত কেলেঙ্কারির ঘটনা যা দেশটির পার্লামেন্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। খবর এএফপি।

জাতিগতভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে মরক্কোর। তবে আবাসন খাত ঘিরে নজিরবিহীন এমন কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেশটির রাজনৈতিক পালে নতুন করে হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

স্বপ্নের আবাসনের ছিটেফোঁটাও দেখতে না পেয়ে গ্রাহকরা এখন রাস্তায় নেমে এসেছেন। এসব গ্রাহকের কয়েকজন সম্প্রতি মরক্কোর একটি পতিত জমিতে বিভিন্ন ব্যানার-পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ করেন। বিক্ষুব্ধ এসব গ্রাহক যে জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান, সেখানে হওয়ার কথা ছিল বিশাল অট্টালিকা। কিন্তু আদতে প্রতিশ্রুতির কোনো বাস্তবায়ন নেই। ফলে পতিত জমিতে দাঁড়িয়ে খোয়া যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার আবেদন করছেন তারা।

আদালত পার্লামেন্ট পর্যন্ত গড়ানো কেলেঙ্কারির ঘটনায় গ্রাহকদের পক্ষে কাজ করছেন এমন একজন আইনজীবীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কাল্পনিক প্রকল্পে আবাসনের স্বপ্ন দেখিয়ে মরক্কোর এক হাজারের বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে ৬০ কোটি দিরহাম বা কোটি ৭০ লাখ ইউরো (সাড়ে কোটি ডলার) হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় চক্রটি। তবে কেলেঙ্কারির সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। শিগগিরই তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

তবে দেশের মধ্যে এমন কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটলেও সেটির দায় নিতে চায় না মরক্কোর সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী সাদ উদ্দিন আল ওসমানীর এমন মন্তব্য হাজারো বিনিয়োগকারীর মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার পারদ বাড়িয়েছে। যার ফলে এসব গ্রাহক এখন দেশটির ষষ্ঠ রাজা মুহাম্মাদের কাছে বিষয়টি মীমাংসায় আবেদন জানিয়েছেন।

তবে মরক্কোর আবাসন খাতে এত বড় কেলেঙ্কারি নতুন করে বেশকিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা এবং দেশটির বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি।

জালিয়াতি চক্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠান বাব ডারনা গ্রুপ। অনেকগুলো ফার্ম নিয়ে তৈরি গ্রুপটি গ্রাহকের কাছ অ্যাপার্টমেন্ট দেয়ার কথা বলে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এসব বিনিয়োগকারী প্রায় এক যুগ ধরে অল্প অল্প করে কাসাব্লাংকা এলাকায় গ্রুপটির অন্তত ১৫টি কাল্পনিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করে এসেছে।

গ্রুপটির কাল্পনিক প্রজেক্টে বিনিয়োগকারীদের একজন ৪৯ বছর বয়সী হুরিয়া। একটি -কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মী হুরিয়া জানান, বিক্রয় প্রতিনিধিদের উচ্চমাত্রায় প্রভাবে পড়ে অ্যাপার্টমেন্টের জন্য লাখ দিরহাম অগ্রিম জমা দিয়েছিলেন তিনি, যা মোট খরচের ২০ শতাংশ। বিস্ময় হতাশা প্রকাশ করে তিনি প্রশ্ন করেন, কারা তাদের রক্ষা করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাপারে কেন সতর্ক ছিল না।

আবাসন খাতের জালিয়াতির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একটি বড় অংশ অভিবাসী। মরক্কোর লাখ লাখ নাগরিক বিভিন্ন দেশে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। যারা প্রায়ই আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন। এদের একজন ৩৬ বছর বয়সী ইউসুফ। একসময় জাপানে বসবাস করা ইউসুফ আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি থেকে রক্ষা পেতে মরক্কো ছেড়েছিলাম। কিন্তু আবারো সেই ফাঁদে আটকা পড়লাম।

তবে আবাসন খাতের জালিয়াতি নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা মনে করেন এমন জালিয়াতির জন্য কেবল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই দায়ী নয়। বরং মরক্কোর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, টাউন কাউন্সিল নগর কর্তৃপক্ষকেও এর দায় নিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন