ধনী দেশগুলোর কাছে আড়াই ট্রিলিয়ন ডলার চায় জাতিসংঘ

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোকে সহায়তায় এগিয়ে আসতে পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি চায়, উন্নত দেশগুলো যেমন নিজেদের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছে, দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তার জন্যও যেন তারা একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ধনী দেশগুলোর কাছে লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারের ( লাখ কোটি পাউন্ড) জরুরি প্রণোদনা প্যাকেজ চেয়েছে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক উইং ইউএন কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড) খবর গার্ডিয়ান।

ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব অর্থনীতিতেই আঘাত হেনেছে নভেল করোনাভাইরাস। উৎপাদনমুখী উন্নত দেশগুলোর জিডিপিতে বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। চাহিদার সংকট সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন লোকসানের মুখে। পতনমুখী শেয়ারবাজার বড় ধরনের মন্দার ইঙ্গিত দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতিগুলো নিজেদের রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু অনুন্নত উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো আর বড় আকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল নেই। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারাই সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে।

আঙ্কটাডও সে কথাই বলছে। সংস্থাটির মতে, করোনাভাইরাস মহামারী যে গতিতে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোকে পতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তা ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের চেয়েও বেশি। সংস্থাটির আশঙ্কা, ধাক্কা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। পরিস্থিতি সামাল দিতে আঙ্কটাড আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) অর্থের জোগান দিতে বলেছে। এছাড়া ব্যাপক হারে ঋণ মওকুফ প্রণোদনা স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করতে নতুন মার্শাল প্ল্যান গ্রহণের মতো পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে তারা।

জাতিসংঘ বর্তমান পরিস্থিতিকে অর্থনৈতিক ধসের সুনামি হিসেবে বিবেচনা করছে। এজন্য তারা পশ্চিমা ধনী দেশগুলোকে অগ্রসরমান অর্থনীতিগুলোর জন্য এমন সহায়তা প্যাকেজ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে, যেমনটি তারা নিজেদের অর্থনীতি বাঁচাতে ঘোষণা করছে।

আঙ্কটাড বলছে, উন্নত দেশগুলো তাদের জাতীয় আয়ের দশমিক শতাংশ সহায়তা প্যাকেজের জন্য বরাদ্দ রাখার ঘোষণা দিয়েছে লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দের সমান।

মার্চে কভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপ বেশি হওয়ার পর থেকেই আইএমএফের কাছে একের পর এক সহায়তার আবেদন জমা পড়েছে। ৮০টির বেশি দেশ সংস্থাটির কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছে। আইএমএফ বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে, মহামারীর কারণে নতুন করে ঋণ সংকটের মুখে পড়তে পারে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো।

এক প্রতিবেদনে আঙ্কটাড জানিয়েছে, চীনের বাইরে করোনাভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার দুই মাসের মধ্যে অগ্রসরমান অর্থনীতিগুলো মারাত্মক মূলধন সংকটে ভুগছে। এছাড়া ঋণের উচ্চহারে সুদ, মুদ্রার অবমূল্যায়ন রফতানি আয় হারানোর চাপেও রয়েছে এসব দেশ।

সংস্থাটির মহাসচিব মুখিশা কিতুয়ি বলেছেন, মহামারীর কারণে অর্থনীতির অধঃগতি চলমান। অবস্থা কতদিন চলবে তা বলা কঠিন। তবে এটি পরিষ্কার, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপ হবে।

আঙ্কটাড মনে করে, কভিড-১৯-এর কারণে স্বাস্থ্য খাতে যে সংকট তৈরি হবে, তা মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট সম্পদ সক্ষমতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেই। এর সঙ্গে বৈশ্বিক মন্দা শুরু হয়ে গেলে এসব দেশের পরিণতি হবে ভয়াবহ। সেক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে তাদের অগ্রসরতা থমকে যাবে।

গত বৃহস্পতিবার গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি২০ নেতারা সংকট মোকাবেলায় বিশ্ব অর্থনীতিতে লাখ কোটি ডলারের বেশি অর্থসহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া তারা দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন।

আঙ্কটাডের গ্লোবালাইজেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজিসের পরিচালক রিচার্ড কোজুল-রাইট বলেছেন, উন্নত দেশগুলো তাদের জনগণ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে যা কিছু করা প্রয়োজন তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে তারা বৈশ্বিক ঐক্য সুসংহত করার কথাও বলেছেন। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গেলে জি২০ দেশগুলোকে শুধু নিজেদের কথা চিন্তা করলেই হবে না, এর বাইরে থাকা ৬০০ কোটি মানুষের কল্যাণের বিষয়টিও দেখতে হবে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন