মুরগীর ডিম সাদা ভালো নাকি বাদামি

বণিক বার্তা অনলাইন

যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা ডিম কিনতে গিয়ে বাদামি নাকি সাদাটা কিনবেন এ নিয়ে হয়তো বিভ্রান্ত হোন। অনেকে মনে করেন বাদামি ডিমে সাদা ডিমের চেয়ে বেশি পুষ্টি থাকে। এমনকি দুটি ডিমের আকার সমান হলেও। বাজারে বাদামি ডিমের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ার কারণেও এমন একটি ধারণা তৈরি হয়ে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে সাদা ডিম সবচেয়ে জনপ্রিয়। আবার এর উল্টোটাও রয়েছে।

পুষ্টির পার্থক্যের কারণেই কী দামে ও জনপ্রিয়তায় এমন পার্থক্য? নাকি দুই রঙের ডিমের মধ্যে ক্যালরির পার্থক্য আছে? কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর- এমন তুলনাও কি করা যায়? অথবা বাদামি ডিম বেশি সুস্বাদু? এমন প্রশ্ন অবশ্য নতুন নয়। এ নিয়ে রীতিমতো গবেষণাও হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির অ্যানিমেল সায়েন্সের শিক্ষক ট্রো ভি বুই বলেন, সাদা ও বাদামি ডিমের মধ্যে পুষ্টিমানে কোনো পার্থক্য আসলে নেই। তবে বাদামি ডিমে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমান কিছুটা বেশি। যদিও এ পার্থক্য একেবারে নগণ্য।

সাধারণ ধারণা হলো, সাদা পালক ও সাদা বা হালকা রঙের কানের লতিবিশিষ্ট মুরগী পাড়ে সাদা ডিম আর বাদামি পালক ও লাল কানের লতি বিশিষ্ট মুরগী পাড়ে বাদামি ডিম। যদিও এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় না। কারণ লেগহর্ন জাতের মুরগী সাদাসহ বিভিন্ন রঙের হয় কিন্তু তারা সবাই সাদা ডিম পাড়ে। ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির প্রাণী ও খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জ্যাকি জ্যাকব বলেন, কিছু প্রজাতিতে বিভিন্ন রঙের পালক বিশিষ্ট মুরগীর দেখা যায়। কিন্তু তারা সবাই একই রঙের ডিম পাড়ে। উদাহরণস্বরূপ লেগহর্ন মুরগীর কথা বলা যেতে পারে। তাছাড়া আরো কিছু জাতের মুরগী আছে যেমন আরাউকানা মুরগী- এরা সবুজ বা নীল রঙের ডিম পাড়ে। তাই বলে কিন্তু এদের পালক সবুজ বা নীল রঙের হয় না।

বাজারে সাদার চেয়ে বাদামি ডিমের দাম বেশি হওয়ার পেছনের কারণ বুঝতে হলে ডিম উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ডিমের খোসার রঙ বাদামি হয় মূলত মুরগীর জরায়ুর মধ্যে। এটিকে বলে শেল গ্ল্যান্ড। এখানে অনেকটা ঘরে রঙ করার মতো ডিমের ওপর বাদামি রঙ যুক্ত হয়। 

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি এক্সটেনশন এ প্রক্রিয়ার একটি চিত্র দিয়েছে। তাদের হিসাবে, একটি ডিম তৈরি হতে প্রায় ২৬ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে প্রাইম টাইমে অর্থাৎ জীবনের প্রথম দুই বছর মুরগী দৈনিক একটি করে ডিম দিতে পারে। ডিম তৈরির প্রক্রিয়াটি শুরু হয় মূলত কুসুম তৈরির মধ্য দিয়ে। গর্ভে তৈরি হয় এটি। এরপর সেটি চলে যায় অভিডাক্ট টিউবে। এখানে কুসুমের চারদিকে সাদা অংশটি (অ্যালবুমিন) তৈরি হতে প্রায় তিন ঘণ্টা লাগে। এরপর খোসার নিচের ঝিল্লি তৈরি হয় ৭৫ মিনিটে। এরপর ডিমটি চলে যায় শেল গ্ল্যান্ডে। এখানেই তৈরি হয় উপরের শক্ত খোসা।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের খাদ্য প্রযুক্তির গবেষক ডিনা জোনস বলেন, শেল গ্ল্যান্ডে একটি ডিম সবচেয়ে বেশি সময় অবস্থান করে। খোসা তৈরি হতে কমপক্ষে ২০ ঘণ্টা সময় লাগে। ডিম তৈরির একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে যোগ হয় রঙ। এটি ঘরে রঙ করার মতো একটা ব্যাপার। সব ডিমই প্রাথমিকভাবে সাদা হয়। সাদা ডিম রঙ করার ধাপটি এড়িয়ে যায়। 

জোনস বলেন, বাদামি ডিমের দাম বেশি হওয়ার পেছনের রহস্য এখানেই। বাদামি রঙ দিতে বেশি পরিমানে পুষ্টি ও শক্তি খরচ হয়। এ কারণে বাদামি লেয়ার মুরগী পালনে খাবারের পেছনে খামারির বেশি খরচ করতে হয়। এ কারণেই বাণিজ্যিকভাবে পালন করা বাদামি পালকের মুরগীর খাদ্যচাহিদা বেশি। 

তবে সাদা ও বাদামি ডিমের মধ্যে পুষ্টি ও ক্যালরির দিক থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য এখনো কোনো গবেষণায় পাওয়া যায়নি। যদিও দুই রঙের ডিমের মধ্যে স্বাদ ও গন্ধে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে বলে অনেকে লক্ষ্য করেছেন। কিন্তু ডিমের স্বাদ অনেকখানি নির্ভর করে মুরগীর খাদ্যের ওপর। ফলে সাদা ও বাদামি মুরগীকে একই ধরনের খাবার দিলে স্বাদে পার্থক্য ধরতে পারাটা কঠিন হবে। অবশ্য বাদামি মুরগীর ডিমের কুসুমের রঙ বেশি গাঢ় দেখায়। এর পেছনের কারণ হলো, ডিম পাড়ার সময় বাদামি মুরগীকে বেশি পরিমাণে শস্য খেতে দেয়া হয়। 

লেয়ার মুরগীর খামারিদের সংগঠন আমেরিকান এগ বোর্ডের হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে সাদা ডিম অত্যন্ত জনপ্রিয়। ২০১৭ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ডিমের বাজারে বাদামি ডিমের হিস্যা মাত্র ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। এর প্রধান কারণ সাদা ডিমের দাম কম, ফলে চাহিদা বেশি। খরচ কম হওয়ায় খামারিও সাদা মুরগী পালনে বেশি আগ্রহী।

সূত্র: হাফিংটন পোস্ট, এনডিটিভি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন