চীনে প্রাদুর্ভাব হওয়া করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। এদিকে ভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নৌ, বিমান ও স্থলবন্দরগুলোয় সংক্রমণ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তকরণে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম জোরদার করে অনেক দেশ। বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিমানবন্দরগুলোয় মেডিকেল টিম কাজ করছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি কোনো সীমান্ত না থাকলেও এরই মধ্যে ভারতের মুম্বাই, কেরালা, বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন স্থানে চীন আগত কিছু ব্যক্তির মাঝে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা গেছে। আর এখন বাড়তি সতর্কতা হিসেবে স্থলবন্দরগুলোতেও সংক্রমণ ঠেকাতে মেডিকেল টিম নিয়োজিত করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। ভারত হয়ে আসা যাত্রীরা যেন এ ভাইরাস বহন করতে না পারেন, সে কারণে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সব যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে মেডিকেল টিম।
দর্শনা স্থলবন্দর: গতকাল সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গায় দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার দল নিয়োজিত আছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শাকিল আরসালানকে প্রধান করে ছয় সদস্যের এ মেডিকেল টিম স্থলবন্দরটিতে কাজ করছে।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় রয়েছে আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন ও জয়নগর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় দেড় হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। যে কারণে মেডিকেল টিমটি এখন চেকপোস্ট দিয়ে আসা ও যাওয়া যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে।
গতকাল ভারত থেকে আসা দুই দেশের যাত্রীরা বলেন, করোনাভাইরাস বিষয়ে ভারতের চেকপোস্টে কোনো নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশের পর সেটা করা হচ্ছে। আর স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা দলের প্রধান ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডা. শাকিল আরসানাল বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখানে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আমরা দুই দেশের যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। কোনো রোগীর সন্ধান পেলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান বলেন, সড়ক ও রেলপথে দুই দেশের যাত্রীরা বাংলাদেশ ও ভারতে আসা-যাওয়া করেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার দল গঠন করা হয়েছে। তবে আমাদের দেশে এ ভাইরাস আসার আশঙ্কা খুবই কম।
হিলি স্থলবন্দর: ভারত থেকে আসা কোনো পাসপোর্টধারী যাত্রী যেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আসতে না পারেন, সেজন্য দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে কাজ শুরু করেছে মেডিকেল টিম। গতকাল দুপুর থেকে চার সদস্যবিশিষ্ট পাঁচটি মেডিকেল টিম ভারত থেকে আসা যাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করছে। প্রতিটি টিমে একজন করে মেডিকেল অফিসার, একজন মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্স ও দুজন স্বাস্থ্য সহকারী রয়েছেন। এসব টিম ভারত থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও রোগের উপসর্গ দেখছে এবং সচেতনতামূলক পরামর্শ দিচ্ছে।
বিলকিছ বেগম ও স্বপন কুমার নামে দুই যাত্রী বলেন, চীনে ভাইরাস দেখা দেয়ায় এখানে মেডিকেল টিম বসেছে, এখানকার ডাক্তাররা আমাদের পরামর্শ দিলেন। যদি কারো ভারত থেকে দেশে প্রবেশের ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাহলে যেন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করি।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুস সাঈদ বলেন, ভারত থেকে দেশে আসা যাত্রীদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে যে গত ১৪ দিনের মধ্যে তারা চীনে গিয়েছিলেন কিনা। যদি গিয়ে থাকেন, তাহলে সেখান থেকে আসার পর তাদের জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথার লক্ষণ ছিল কিনা সেটি নিশ্চিত হচ্ছি। এ পর্যন্ত কারো এ ধরনের লক্ষণ পাওয়া যায়নি, তবে কারো মধ্যে পাওয়া গেলে তাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে তাকে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে।