ভারতীয় সেলফোন অপারেটরদের দেড় লাখ কোটি রুপির ধাক্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত বছর অক্টোবরে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশন ভোডাফোন আইডিয়ার কাছ থেকে লাখ ৪৭ হাজার কোটি রুপি বকেয়া আদায়ের যে আদেশ দিয়েছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত, তা পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। এর ফলে দেশটির সেলফোন অপারেটরগুলোর সামনে বকেয়া অর্থ পরিশোধে বিলম্ব করার আর কোনো উপায় থাকল না। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত সেলফোন অপারেটরগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর পিটিআই।

২০০৫ সাল থেকে অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউর (এজিআর) সংজ্ঞা নিয়ে ভারতের ব্যক্তি খাতের টেলিকম কোম্পানি এবং দেশটির টেলিকম বিভাগের (ডিওটি) মধ্যে আইনি লড়াই চলে আসছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে এজিআর নিয়ে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশন ভোডাফোন আইডিয়ার মতো টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন খারিজ করে দিয়ে ডিওটির সংজ্ঞাকে বৈধতা দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। একই সময় বকেয়া পরিশোধে সেলফোন অপারেটরগুলোকে ছয় মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এর কয়েক সপ্তাহ পর দেশটির সেলফোন অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি অরুণ মিশ্র, এসএ নাজির এবং এমআর শাহের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সেলফোন অপারেটরগুলোর বকেয়া পরিশোধের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের যোগ্যতা খুঁজে পাননি বলে তা খারিজ করে দেন। সেলফোন অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে রায় পর্যালোচনার জন্য একটি উন্মুক্ত শুনানির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এতে সায় দেননি।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারকে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ভোডাফোন-আইডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বকেয়া লাইসেন্স ফি বাবদ মোট ৯২ হাজার ৬৪২ কোটি রুপি পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া স্পেকট্রাম ইউজেস চার্জ বাবদ আরো ৫৫ হাজার ৫৪ কোটি রুপি বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে আগের এক হলফনামায় ডিওটি জানিয়েছিল, দেশটির সরকারের লাইসেন্স ফি বাবদ ভারতী এয়ারটেলের কাছে ২১ হাজার ৬৮২ কোটি রুপি এবং ভোডাফোনের কাছে ১৯ হাজার ৮২৩ কোটি রুপি পাওনা রয়েছে। এছাড়া রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস, বিএসএনএল এবং এমটিএনএলের কাছে সরকারের পাওনা রয়েছে যথাক্রমে ১৬ হাজার ৪৫৬ কোটি রুপি, হাজার ৯৮ কোটি এবং হাজার ৫৩৭ কোটি রুপি।

গত অক্টোবরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিওএআই) ১৪ বছর আগে ডিওটি নির্ধারিত এজিআরের সংজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রথম মামলা দায়ের করেছিল। ওই মামলায় দাবি করা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার এজিআরে যে উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে, সেগুলো টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (টিআরএআই) সুপারিশে প্রণয়নকৃত টেলিগ্রাফ অ্যাক্টের পরিপন্থী।

সিওআইয়ের দাবি, ডিওটি নির্ধারিত বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেলফোন অপারেটরগুলো এরই মধ্যে ৮৫ শতাংশ বর্ধিত ফি পরিশোধ করেছে। বাকি ১৫ শতাংশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চলছে।

তবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউর মধ্যে লাইসেন্স ফি ছাড়াও অন্যান্য বিষয় যুক্ত হবে। তবে এক্ষেত্রে মূল সম্পদ বিক্রি ইন্স্যুরেন্স দাবির বিষয়টি পড়বে না। রায় ভারতের টেলিকম বিভাগের জন্য স্বস্তিকর হলেও সেলফোন অপারেটরগুলোর জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। এমনিতে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিরাজ করছে। এর মধ্যে বড় অংকের বকেয়া পরিশোধের রায় বাড়তি জটিলতা সৃষ্টি করবে।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, আদালতের রায় ১৫টি পুরনো সেলফোন অপারেটরের ওপর প্রভাব ফেলবে। এর মধ্যে ব্যক্তি খাতের বড় দুটি অপারেটরের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে সরকারের অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। সেলফোন অপারেটরগুলোর চাপিয়ে দেয়া আর্থিক বোঝা দূর করার জুতসই পদ্ধতি বের করার বিকল্প নেই। কারণ ভারতের টেলিকম বিভাগের দাবি করা বকেয়া অর্থ পরিশোধ করার মতো অবস্থায় নেই ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস।

বিবৃতিতে সেলফোন অপারেটরগুলো যুক্তি দেখিয়েছে, টেলিযোগাযোগ ছাড়া অন্যান্য রাজস্ব যেমন ভাড়া, ইন্টারনেট সেবা থেকে আয় ডিভিডেন্ডের আয় এজিআর থেকে বাদ দিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন