প্রথম আলোর সম্পাদকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

বণিক বার্তা অনলাইন

কিশোর সাময়িকী ‘কিশোর আলোর’ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিদ্যুতায়িত হয়ে নাইমুল আবরার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম এ-সংক্রান্তে দাখিল হওয়া পুলিশ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ পরোয়ানা জারি করেছেন।
পরোয়ানা জারি হওয়া অন্য আসামিরা হলেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্টিভিশন কবির বকুল, নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক শুভ, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম পাভেল, নির্বাহী শাহপরান তুষার, ডেকোরেশন ও জেনারেটর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জসিম উদ্দিন অপু, মোশারফ হোসেন, সুজন ও কামরুল হাওলাদার।

গত বছর ৬ নভেম্বর নিহত নাইমুল আবরারের পিতা মো. মজিবুর রহমান একই আদালতে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় এ মামলা করেন, যার সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
মামলাটি তদন্তের পর মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক আব্দুল আলীম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার আদালত আমলে নিয়ে পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদীর ছেলে নাইমুল আবরার (১৫) গত ১ নভেম্বর ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে কিশোরদের মাসিক সাময়িকী কিশোর আলোর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে যায়। সে ওই প্রতিষ্ঠানেরই নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠান চলাকালে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আবরার বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। অনুষ্ঠানের জন্য যে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হয় তা অরক্ষিত ছিল। এরূপ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার যে নিরাপত্তামূলক ও সাবধানতার ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল তা করা হয়নি।


অভিযোগে আরো বলা হয়, ঘটনাস্থলের কাছেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থাকলেও আবরারকে দূরবর্তী ‘মহাখালী ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে’ নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গত ১ নভেম্বর ইস্যুকৃত মৃত্যু সনদে দেখা যায়, নিহত আবরার ওই তারিখে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে ভর্তি হয় এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক ৪টা ৫১ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যেখানে আবরার বেলা সাড়ে ৩টায় বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়। আর মৃত্যু সংবাদ জানার পরও মৃত্যুর সংবাদ গোপন রেখে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চালিয়ে যায়।

অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর আবরারের পরিবারকে ৭টার পর সহপাঠীর মাধ্যমে মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়েছে দাবি করে অভিযোগপত্রে এটাকে ‘পরিকল্পিত অবহেলাজনিত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরো অভিযোগ করা হয়েছে, পরে বাদী ও তার পরিবার হাসপাতালে এলে মৃত্যুকে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এরপর বাদী দ্রুত মরদেহ চাইলে মুচলেকা রেখে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। ফলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন হয়। পরবর্তী সময়ে নাইমুল আবরারের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা দৃশ্যমান হতে থাকে। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা গত ২ নভেম্বর ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে।
আরো বলা হয়, বাদীর দৃঢ় বিশ্বাস নাইমুল আবরারের মৃত্যু অপমৃত্যু নয়। বরং আসামিদের চরম অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসায় অবহেলা, অযত্ন, অমনোযোগী, গাফিলতি ও অসাবধানতার কারণে ঘটেছে, যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৪-এ ধারার অপরাধ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন