গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১
লাখ ৪৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে,
যা নভেম্বরের চেয়ে প্রায় এক লাখ কম। তবে
বেকারত্বের হার রেকর্ড সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৫০ শতাংশে রাখতে পেরেছে দেশটি। গত
নভেম্বরে রেকর্ড ২ লাখ ৫৬ হাজার কর্মসংস্থানের পর জেনারেল মোটরসের (জিএম) ধর্মঘটের
জেরে গত মাসে কর্মসংস্থান কিছুটা কমেছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মন্ত্রণালয়
কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক কর্মসংস্থান প্রতিবেদনে উপাত্তগুলো উঠে এসেছে। খবর এপি, রয়টার্স
ও সিএনএন বিজনেস।
বিভিন্ন খাতে বেকারত্ব কমলেও বেতন
বৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। এ মিশ্র প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল
রিজার্ভের (ফেড) মূল্যায়নের সঙ্গে বড় কোনো পার্থক্য তৈরি করেনি। মার্কিন অর্থনীতি ও
আর্থিক নীতি ‘বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে’ বলে সর্বশেষ পলিসি মিটিংয়ে জানিয়েছিল ফেড।
২০১৯ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে ২১ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা ২০১৮ সালের ২৭ লাখের চেয়ে অনেক কম। তবে কর্মসংস্থান হ্রাসের ক্ষেত্রে বেকার মানুষের সংখ্যা হ্রাসও ভূমিকা রেখেছে।
কর্মপ্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা গত কয়েক বছরে ৫ লাখ ৪০ হাজার কমে ৫৭ লাখ ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। বেকার মানুষের সংখ্যা কমায় কর্মসংস্থান প্রত্যাশীর সংখ্যাও কমছে। অ্যাডওয়ার্ড জোনসের বিনিয়োগ স্ট্র্যাটেজিস্ট নেলা রিচার্ডসন সিএনএন বিজনেসকে বলেন, যতদিন পর্যন্ত মাসিক এক লাখ বা তার চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হবে, ততদিন পর্যন্ত অর্থনীতি গতিশীল থাকবে।
২০২০ সালের পূর্বাভাসে রিচার্ডসন বলেন, আমি মনে করি, ২০২০ সালে শ্রমবাজার বেশ শক্তিশালী থাকবে, কিন্তু কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়বে।
গত কয়েক বছরে কর্মসংস্থানে স্থিতিশীল
প্রবৃদ্ধিতে ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ হলিডে মৌসুমে খুচরা বিক্রি আগের
বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানায় মাস্টারকার্ড স্পেন্ডিংপালস। এ
কারণে রিটেইল খাতে গত ডিসেম্বরে কর্মসংস্থান ৪১ হাজার ২০০ বেড়েছে। রেস্টুরেন্ট ও
হোটেলের মতো অবকাশ ও আপ্যায়ন খাতে নতুন ৪০ হাজার কর্মী যুক্ত হয়েছে।
পিএনসি ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের
মুখ্য অর্থনীতিবিদ গাস ফাউচার বলেন,
আমরা বেশ ভালো অবস্থানে ২০২০ শুরু করতে যাচ্ছি।
ভোক্তাদের ওপর দাঁড়িয়ে চলতি বছরজুড়েই অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ আশা করছি আমরা।
স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সহায়তায় ৩৩
হাজার ৯০০ কর্মসংস্থান হয়েছে। শ্রম বিভাগের প্রতিবেদনটিতে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের
অব্যাহত সংকটের বিষয়ও উঠে এসেছে। গত ডিসেম্বরে বিভিন্ন কারখানায় ১২ হাজার শ্রমিক
ছাঁটাই হয়েছে। ২০১৯ জুড়েই ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে মাত্র ৪৬ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে, যা
২০১৮ সালের এক-পঞ্চমাংশ মাত্র। ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে প্রায় ১৮ মাস ধরে চলা
বাণিজ্যযুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতির কারণে গত বছরজুড়েই
ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সংকট বিরাজ করছিল। এছাড়া বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স নিয়ে
নিরাপত্তা শঙ্কা এবং বিশ্বজুড়ে গ্রাউন্ডিংয়ের ফলে নতুন উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশের
ক্রয়াদেশ সংকোচনও এতে প্রভাব ফেলেছে।
নির্মাণ খাতের জন্যও আরেকটি খারাপ
বছর গেছে। ২০১৯ সালে নির্মাণ খাতে মাত্র ১
লাখ ৫১ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে,
যা পূর্ববর্তী বছরের অর্ধেকের সমান।
কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও
ঘণ্টাপ্রতি মজুরি সে হারে বাড়েনি। গত ডিসেম্বরে বার্ষিক গড় মজুরি প্রবৃদ্ধি ছিল ২
দশমিক ৯০ শতাংশ, এর আগের বছরের একই মাসে যা ছিল ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে জানুয়ারিতে
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে মজুরি বাড়তে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন
প্রদেশ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন ১৫ ডলার মজুরি নির্ধারণ করেছে।
এদিকে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা
২০১৮ সালে ছিল ৩ শতাংশ। আগামী সপ্তাহে চীনের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের বাণিজ্য
চুক্তি সম্পন্ন হলে মার্কিন অর্থনীতিতে আরো চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে বলে মনে করছেন
নীতিনির্ধারকরা।