[পূর্ব প্রকাশের পর]
গণিত ভাবনা পর্ব ১৬: বোকা
বাংলা ভাষার বর্তমান সময়কার অন্যতম প্রধান কবি কামাল চৌধুরী। কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন ২০১১ সালে। সম্পর্কে আমার আপন মেজ ভাই। মেজ ভাইয়ের প্রথম বই মিছিলের সমান বয়সী বের হয়েছিল ১৯৮১ সালে। ভাই তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার লেখা সেরা কবিতার কয়েকটা আছে মিছিলের সমান বয়সীতে। মিছিলের সমান বয়সীর প্রধান আকর্ষণ সনেট আকারে লেখা কবিতা ‘রক্তাক্ত পঙিক্তমালা’। আশ্চর্য শক্তিশালী এ কবিতাটা। রক্তাক্ত পঙিক্তমালা ছাড়াও বইটিতে আরো বেশকিছু চমত্কার লেখা আছে। বইটির এক প্রধান বৈশিষ্ট্য যে অনেক কবিতাই ছন্দে লেখা। ছন্দের আঁটসাঁট বুনটে কবিতা লেখা বেশ কঠিন। মেজ ভাই বছর বিশের দিকেই তা রপ্ত করতে পেরেছিলেন।
সেই গ্রন্থে গদ্য ছন্দে লেখাও কিছু কবিতা আছে। এ রকম একটা কবিতা ‘অলৌকিক মানুষের গল্প’। কবিতাটির কাহিনী চমত্কার। কবির কাছে স্বপ্নে এক সৌম্যকান্তি অলৌকিক মানুষ দেখা দিয়েছেন। তিনি বলছেন বর প্রার্থনা করতে। বলছেন অর্থ, ক্ষমতা যা চাওয়া হোক, তাই দেয়া হবে। কবি অনেক সময় নিয়ে চিন্তা করে বললেন তার চাই লাখ লাখ অমর কবিতার বর; যা হবে রবীন্দ্রনাথের মতো স্থিতধী, নজরুলের মতো বেগবান, নেরুদার মতো কঠোর। অলৌকিক মানুষ তাকে সেই কবিতার বর দিয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে উচ্চারণ করে গেলেন একটা শব্দ ‘বোকা’।
এই বোকা শব্দ নিয়ে এবারের পর্বের শিরোনাম। কারণ আমরা এবার এমন একজন গণিতবিদের কথা বলব, যিনি অর্থবিত্ত কোনো কিছু নিয়েই মাথা ঘামাননি। তিনি শুধু একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলেন, এর চেয়ে আর বেশি কিছু চাননি। এ গণিতবিদের নাম গ্রিগোরি পেরেলমান। জাতিতে রুশ, জন্ম ১৯৬৬ সালে, বর্তমানে বয়স ৫২ বছর। ‘অলৌকিক মানুষের গল্প’ কবিতাটার সংজ্ঞা অনুসারে পেরেলমানও একজন বোকা।
একটু পূর্বকথা না বললে ব্যাপারটা বোঝা কঠিন হবে, তাই আমরা আগে একটু গণিতের ইতিহাসের দিকে তাকাব। গণিতের ইতিহাস হলো ধারাবাহিকতার ইতিহাস। বর্তমান গণিতের যে পর্যায়, তা একদিনে সৃষ্টি হয়নি; বরং যুগ যুগ ধরে চর্চার পর গণিত এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। গণিতের ইতিহাসে দুই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মাঝে গণিতবিদরা গণিতের বিভিন্ন তত্ত্বের প্রমাণ দিয়ে গেছেন। আবার মাঝে বিভিন্ন তত্ত্বের প্রস্তাব