জয় দিয়ে ভারত সফর শুরু টাইগারদের

জয়ের খুব কাছাকাছি বাংলাদেশ।  ব্যাট হাতে ২২ গজে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ।এ যেন নিদাহাস ট্রফির সেই ম্যাচ কিংবা ২০১৬-র টি-টোয়ে্ন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচেরই উত্তেজনা। এবার হবে কি সেই প্রতিশোধ নেয়া? পারবেন কি মাহমুদুল্লাহ-মুশফিক? গ্যালারিতো বটেই টেলিভিশন সেটের সামনে যারা বসে খেলা দেখছেন তাদের চোখে মুখেও উত্তেজনার আভাস।  হ্যাঁ পেরেছেন, তিন বল বাকী থাকতেই ঐতিহাসিক এই ম্যাচে ৭ উইকেটের বড় জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। টি-টোয়েন্টিতে একমাত্র অজেয় ভারতকে নবম ম্যাচে এসে হারিয়েছে বাংলাদেশ তাদেরই দেশের রাজধানীতে। 

দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সম্ভবত সবচেয়ে এলোমেলো সময়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।  ক্রিকেটারদের ধর্মঘট, সাকিবের নিষেধাজ্ঞা, বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের টানাপোড়েন; সব মিলিয়ে টালমাটাল অবস্থা। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অপেনার তামিমের ছুটি।  নির্ভরযোগ্য অভিজ্ঞ দুই খেলোয়াড়কে দেশে রেখেই ভারতের মাটিতে পা রেখেছিল টিম টাইগার। বাগড়া দিয়েছিল দিল্লির আবহাওয়াও।  বাংলাদেশের ইনিংসের ২০তম ওভারের তৃতীয় বলটির সঙ্গে সবই যেন আছড়ে পড়লো বাউন্ডারির বাইরে। ম্যাচটা আরো এক কারণে মনে রাখার মতো।  ২০০৫ সালে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম সংস্করণে হাজারতম ম্যাচ ছিল আজ।  সুযোগ পেয়ে স্মরণীয় করে রাখলেন টাইগাররা।  স্বাগতিকদের করা ১৪৮ রানের জবাবে ৩ বল বাকি থাকতেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ।

ব্যাট হাতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ বলে ৬০ রান এসেছে মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকের কাছ থেকেই। সেই সঙ্গে তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে যুক্ত হল পঞ্চম ফিফটির।

শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ দুলছিল পেন্ডুলামের মতো।  ইনিংসের প্রথম তিন বলেই ৭ রান নিয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন লিটন।  কিন্তু স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল আলতো করে টোকা দিতে গিয়ে সেই ওভারেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।  এরপর অভিষিক্ত নাইম শেখের সঙ্গে সৌম্য সরকার জুটি বেঁধে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।  ৭ ওভারেও এক উইকেট হারিয়ে ৫৩ রান জমা হয় স্কোরবোর্ডে, কিন্তু অষ্টম ওভারে লেগস্পিনার ইয়ুজভেন্দ্র চাহাল আক্রমণে আসতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। নিজের প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন নাইমকে। পরপর তিনটি ডট বলে খেই হারিয়ে ফেলেন তরুণ নাইম। ফলে হাওয়ায় ভাসিয়ে খেলার চেষ্টায় আউট হন ২৮ বলে ২৬ রান করে।  

চাহালের মিতব্যয়ী বলিংয়ে ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর আটকায় ৬১ রানে।  এটিকে চাপ হিসেবে না নিয়ে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে থাকেন মুশফিক ও সৌম্য।  মুশফিকের ভাগ্য সহায়েই ছিল বলা যায়। চাহালের তৃতীয় ওভারে দুইবার নিশ্চিত লেগ বিফোরের হাত থেকে বেঁচে যান তিনি।  বেশ কিছুদিন ধরেই অফফর্মে থাকা সৌম্য দারুণ সঙ্গ দেন মুশফিককে। তবে শেষ করতে পারেননি ম্যাচ। ইনিংসের ১৭তম ওভারের শেষ বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। আউট হওয়ার আগে ১ চার ও ২ ছয়ের মারে ৩৫ বলে ৩৯ রান রান করেন তিনি।

তখনও ম্যাচ জয়ের জন্য বাংলাদেশকে করতে হতো ১৮ বলে ৩৫ রান। ঠিক তখন ফের বল হাতে আসেন চাহাল।  এবার আর পাত্তা পাননি।  অবশ্যওভারের তৃতীয় বলে আউট হতে পারতেন মুশফিক। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। বাউন্ডারি পেয়ে যান মুশফিক। একই ওভারের শেষ বলে মাহমুদউল্লাহ আরেকটি বাউন্ডারি হাঁকালে ১৩ রান পায় বাংলাদেশ। শেষ দুই ওভারে টাইগারদের প্রয়োজন আর ২২ রান।

ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোটা থাকলেও চিন্তার রেখা কমেনি টাইগার ভক্তদের। এমন জয়ের কাছাকাছি গিয়েও তীরে এসে তরী ডুবেছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু এবার আর সেই সুযোগ দিলেন না মুশফিক। খলিল আহমেদের করা সেই ওভারের শেষ চার বলে টানা বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তুলে নেন ১৮টি রান। আর শেষ ওভারে বাকি থাকা ৪ রান করতে কোনো সমস্যাই হয়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। অষ্টম ওভারে উইকেটে এসে শেষপর্যন্ত দলকে জিতে মাঠ ছাড়ার পুরস্কার হিসেবে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন মুশফিক।  

এর আগে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ওভারে তিনি বল তুলে দেন শফিউল ইসলামের হাতে। শুরুটা হয়েছিল খুবই বাজে। ওভারের প্রথম পাঁচ ডেলিভারিতে ১০ রান দিয়ে বসেন শফিউল। রোহিত শর্মা হাঁকান দুই বাউন্ডারি। তবে শেষ বলে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফিরে রোহিতের ভয়ঙ্কর রূপ বেশিক্ষণ দেখতে হয়নি টাইগারদের।  ১০ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ভারত।

দ্বিতীয় উইকেটে সেই বিপদ কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন শিখর ধাওয়ান আর লোকেশ রাহুল। গড়ে তোলেন ২৬ রানের।  ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নাম বাংলাদেশের তরুণ স্পিনার বিপ্লবের বলে ১৭ বলে ১৫ রান করে ফেরেন লোকেশ রাহুল।  পরের আঘাতও বিপ্লবের। তার বলে ১৩ বলে ২২ রান করা শ্রেয়াস আয়ার বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন নাইম শেখের হাতে।

এরপর কিছুটা ধীরগতিতে চাপ সামলাচ্ছিলেন শিখর ধাওয়ান। তবে ৪২ বলে ৪১ রান করে রানআউটের কবলে পড়েন ধাওয়ান। মাহমুদউল্লাহর ওভারে সিঙ্গেলের জন্য দৌড়েছিলেন, কিন্তু অপরপ্রান্তে থাকা রিশাভ পান্ত সাড়া দেননি। মুশফিক বল পেয়ে স্ট্যাম্পটা ভেঙে দিতে ভুল করেননি। এরপর উইকেটে আসেন আজই অভিষিক্ত শিভাম দুবে।  ৪ বল খেলে ১ রান করেই তিনি শিকার হন আফিফ হোসেনের। 

আফিফের এই ক্যাচে ১০২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। বড় রানের আশা শেষ হয়ে যায় তখনই। ১৯তম ওভারে রিশাভ পান্তকেও তুলে নেন শফিউল। ২৬ বলে ২৭ রান করেন মারকুটে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তবে সপ্তম উইকেটে ক্রুনাল পান্ডিয়া আর ওয়াশিংটন সুন্দর ১০ বলের জুটিতে তুলে দেন ২৮ রান। সুন্দর ৫ বলে ১৪ আর ক্রুনাল ৮ বলে করেন অপরাজিত ১৫ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ১৪৮/৬ (ধাওয়ান ৪১, রোহিত ৯, রাহুল ১৫, শ্রেয়াস ২২, পান্ত ২৭, দুবে ১, পান্ডিয়া ১৫*, সুন্দর ১৪*; শফিউল ৪-০-৩৬-২, আল আমিন ৪-০-২৭-০, মুস্তাফিজ ২-০-১৫-০, আমিনুল ৩-০-২২-২, সৌম্য ২-০-১৬-০, আফিফ ২-০-১৫-০, মোসাদ্দেক ১-০-৮-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১০-০)

বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১৫৪/৩ (লিটন ৭, নাঈম ২৬, সৌম্য ৩৯, মুশফিক ৬০*, মাহমুদউল্লাহ ১৫*; চাহার ৩-০-২৪-১, সুন্দর ৪-০-২৫-০, খলিল ৪-০-৩৭-১, চেহেল ৪-০-২৪-১ , পান্ডিয়া ৪-০-৩২-০, দুবে ০.৩-০-৯-০ )।

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন