ডব্লিউইএফের প্রতিবেদন

দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি পানি সংকট

বণিক বার্তা ডেস্ক

এ মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে পানি সংকটকে দেখছেন অঞ্চলটির নির্বাহীরা। এক বছর আগেও পানি সংকট দক্ষিণ এশিয়ার পঞ্চম শীর্ষ ঝুঁকি ছিল। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) খবর দ্য ডন।

রিজিওনাল রিস্কস ফর ডুয়িং বিজনেস, ২০১৯ শীর্ষক প্রতিবেদনে দাভোসভিত্তিক ফোরামটি দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ ১০টি ঝুঁকি শনাক্ত করেছে। এগুলো হলো পানি সংকট, সন্ত্রাসবাদী হামলা, মানবসৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়, নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা, অস্থিতিশীল জ্বালানি মূল্য, মূল্যসংকোচন, বেকারত্ব বা স্বল্প কর্মসংস্থান, রাষ্ট্রের পতন বা সংকট, আর্থিক সংকট ও সম্পদ বুদবুদ (অ্যাসেট বাবল)

দেশের ক্ষেত্রে, ভারতের শীর্ষতম ঝুঁকি হিসেবে রয়েছে পানি সংকট। এছাড়া এটি পাকিস্তানে দ্বিতীয় ও শ্রীলংকার চতুর্থ শীর্ষ ঝুঁকি। পানি সংকটের সমস্যাটিকে দক্ষিণ এশিয়ায়প্রাচুর্য সত্ত্বেও ঘাটতির সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অঞ্চলটিতে বড় বড় আন্তঃসীমান্ত নদী থাকা সত্ত্বেও বহু স্থানেই সুপেয় পানির সীমিত সরবরাহের কারণে লোকজনকে লাইন ধরে দাঁড়াতে হয়।

ডব্লিউইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানি এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। সিন্ধু বা গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত-পাকিস্তান বা ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থাকলেও সীমান্ত বিরোধের সময় অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার হয়ে ওঠে পানি। বিতর্কিত অঞ্চলগুলোয় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশগুলোকে মাঝে মাঝেই পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিতে দেখা যায়। এদিকে বেশ কয়েকটি বড় নদীর উৎস চীন জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। যে কারণেও দেশটির সঙ্গে বিশেষ করে ভারতের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্বের যে ১৭টি দেশে তীব্র পানি সংকট রয়েছে তার মধ্যে ভারত একটি। এর মধ্যে দেশটির উত্তরাঞ্চল তীব্র আকারে ভূগর্ভস্থ পানিশূন্যতার শিকার। চলতি বছর ভারতের ষষ্ঠ বৃহৎ শহর চেন্নাইয়ে তীব্র খরা দেখা দেয়। শহরটির জনসংখ্যা ১ কোটির বেশি। ২০২০ সাল নাগাদ নয়াদিল্লিসহ দেশটির ২০টির বেশি শহর ভূগর্ভস্থ পানি শেষ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হবে।

বিশ্বে সর্বোচ্চ পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তান, আবার একই সময় দেশটিপানির অভাবে থাকা দেশগুলোর শ্রেণীতে পড়ার কাছাকাছিও রয়েছে। পাকিস্তানের অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জের একটা হলো দেশটিতে জনগণের কাছে পরিষ্কার পানীয় জল সরবরাহের জন্য যথাযথ অবকাঠামোর ঘাটতি। তার ওপর দেশটির সিংহভাগ পানির উৎসও একটিসিন্ধু, যা চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার কারণে বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জনসংখ্যা বসবাস করছে দক্ষিণ এশিয়ায়। কিন্তু বিশ্বের নবায়নযোগ্য পানির উৎসের ৫ শতাংশেরও কম রয়েছে অঞ্চলটিতে। মাথাপিছু পানির কম সহজলভ্যতা ও পানির অপেক্ষাকৃত উচ্চ ব্যবহার দক্ষিণ এশিয়াকে বিশ্বের অন্যতম পানি ঘাটতির অঞ্চলে পরিণত করেছে। এর পাশাপাশি বৈশ্বিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ায় পানির মজুতও অনেক নিচের দিকে রয়েছে, যার ফলে অঞ্চলটির জন্য বন্যা ও খরা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে এবং এতে অঞ্চলটি ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ পরিস্থিতি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় শীর্ষ ঝুঁকি হিসেবে রয়েছে সন্ত্রাসবাদী হামলা, যা আন্তঃআঞ্চলিক টানাপড়েনের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তৃতীয় শীর্ষ ঝুঁকি হিসেবে রয়েছে মানবসৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের তথ্যানুসারে, বিশ্বের চারটি শীর্ষ জনবহুল দেশের তিনটিই দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিতবাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ২০টি শহরের ১৫টিই ভারতে অবস্থিত। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও এ তালিকায় রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন