টেলিনর বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসার অঙ্গীকার এখন রাখবে কি

আরফিন শরিয়ত

গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নরওয়ের রাজধানী অসলোতে ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সম্মেলনে তিনি নরওয়েজিয়ান টেলিকম কোম্পানি টেলিনরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। সামাজিক ব্যবসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নরওয়ের কোম্পানিটি বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে তা না রাখার অভিযোগ আনা হয়। শর্তভঙ্গের জন্য টেলিনরকে আইনি পদক্ষেপ মোকাবেলা করতে হবে বলেও সতর্ক করেন ড. ইউনূস। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স সেদিন শিরোনাম করে ‘গ্রামীণফোন নিয়ে টেলিনরের সঙ্গে লড়াইয়ে শান্তি বিজয়ী’। 

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের ৬২ শতাংশ শেয়ারের মালিক তখন টেলিনর। বাকি ৩৮ শতাংশ ড. ইউনূসের অলাভজনক সংস্থা গ্রামীণ টেলিকমের। ১৯৯৬ সালের গ্রামীণফোন কনসোর্টিয়াম (জিপিসি) গঠনের সময় করা সমঝোতা চুক্তিতে টেলিনর ছয় বছরের মধ্যে কোম্পানির অংশীদারত্ব ৩৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে দীর্ঘ সময়েও তা বাস্তবায়ন না করায় ড. ইউনূস টেলিনরের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভাঙার অভিযোগ আনেন। 

দরিদ্র ও ভূমিহীন নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক ব্যবসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশে যাত্রা শুরু হয়েছিল গ্রামীণফোনের। দীর্ঘদিন সরকারি অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়িকভাবেও লাভবান হয়েছে কোম্পানিটি। হয়ে উঠেছে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণফোন গঠনের সময় অংশীদারদের মধ্যে করা চুক্তি অনুযায়ী ছয় বছরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল টেলিনরের। যদিও তারা সেটি আর বাস্তবায়ন করেনি।

শান্তিতে ২০০৬ সালে নোবেল বিজয়ের পর ড. ইউনূসের দেয়া বক্তৃতায়ও গ্রামীণফোন নিয়ে তার স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন। ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর দেয়া নোবেল বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘গ্রামীণফোন নরওয়ের টেলিনর এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ টেলিকমের মালিকানাধীন একটি যৌথ-উদ্যোগী কোম্পানি। এর মধ্যে টেলিনর ৬২ শতাংশ শেয়ারের মালিক, গ্রামীণ টেলিকম ৩৮ শতাংশের। গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র নারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মালিকানা প্রদানের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত এ সংস্থাটিকে একটি সামাজিক ব্যবসায় রূপান্তর করাই ছিল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একদিন গ্রামীণফোন দরিদ্র মানুষের মালিকানাধীন একটি বড় প্রতিষ্ঠানের আরেকটি উদাহরণ হয়ে উঠবে।’

দেশে তারবিহীন ফোন চালু করতে ১৯৯৬ সালের ৫ নভেম্বর গঠিত হয়েছিল জিপিসি। নরওয়েজিয়ান টেলিকম গ্রুপ টেলিনর, বাংলাদেশের গ্রামীণ টেলিকম ও নিউইয়র্কভিত্তিক গণফোন এ উদ্দেশ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। সে অনুযায়ী, তিন অংশীদারের মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ, টেলিনর ৫১ শতাংশ ও গণফোন ৪ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবে বলে উল্লেখ করা হয়। চুক্তিতে আরো বলা হয়েছিল, ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ছয় বছর পর সামাজিক ব্যবসার অংশ হিসেবে গ্রামীণফোনে টেলিনরের অংশীদারত্ব কমিয়ে ৩৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। যদিও ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর আড়াই দশক পার হলেও এখনো সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি টেলিনর।

ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম অবশ্য নিজেদের লক্ষ্য থেকে সরে যায়নি। প্রতিষ্ঠার পর প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে গ্রামীণ টেলিকম। ১৯৯৯ সালে গঠন করা হয় গ্রামীণ শিক্ষা। এর মাধ্যমে স্কলারশিপ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম, বস্তিবাসী শিশুদের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। একই বছর প্রতিষ্ঠা করা হয় গ্রামীণ নিটওয়্যার লিমিটেড। এর আয় থেকে ২০০৫ সালে গঠন করা হয় গ্রামীণ টেলিকম কিয়স্ক। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিস লিমিটেড। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্যসেবা দিতে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কমিউনিটি ইনফরমেশন সেন্টার। ২০০৮ সালে গ্রামের সব ফোন নম্বরকে পোস্ট পেইড থেকে প্রি-পেইডে রূপান্তর করা হয়। একই বছর গঠন করা হয় গ্রামীণ ফ্যাব্রিকস অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেড। ২০১০ সালে গঠন করা হয় গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে সামাজিক ব্যবসার ধারণা বাস্তবায়ন ও সহজতর করার উদ্যোগ নেয়া হয়। একই বছর গঠন করা হয় গ্রামীণ শক্তি সামাজিক ব্যবসা লিমিটেড। এ কোম্পানির মাধ্যমে গ্রামের তরুণদের অর্থায়ন করা হয়। বিনিয়োগ করা হয় গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিস লিমিটেড, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডেও। প্যারিসভিত্তিক খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ডেননের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয় গ্রামীণ ডেনন ফুডস। 

গ্রামীণফোনের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে ২০০৭ সালের ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটিতে টেলিনরের ইকুইটি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর পরের বছরের সেপ্টেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির ইকুইটি বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এ বছরের জুন শেষেও এর পরিমাণ একই ছিল। 

গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ বাবদ বড় অংকের অর্থ পেয়েছে টেলিনর। গ্রামীণফোনের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০০২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে গ্রামীণফোন থেকে টেলিনর লভ্যাংশ পেয়েছে ১৮ হাজার ১ কোটি টাকা। এর মধ্যে একক বছর হিসেবে ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা পেয়েছে। গ্রামীণফোন আইপিওর মাধ্যমে ২০০৯ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর মধ্যে আইপিওর আগে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে টেলিনর ৪৭৭ কোটি টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে।

চুক্তি অনুসারে সামাজিক ব্যবসার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শেয়ার হস্তান্তর না করায় টেলিনরের সঙ্গে টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। ২০০৭ সালে টেলিনরের অংশীদারত্ব কেনার জন্য ড. ইউনূস ৪২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন বলে জানায় নরওয়ের জাতীয় দৈনিক আফটেনপোস্টেন। তবে সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি টেলিনর। ওই বছরের মার্চে নরওয়ের জাতীয় দৈনিক ডেগব্লাডেটের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘গ্রামীণফোনের ১৩ শতাংশ শেয়ার কেনার মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫১ শতাংশ শেয়ারের অংশীদারে পরিণত হতে গ্রামীণ টেলিকম প্রস্তুত।’ সে সময়ে গ্রামীণফোনের ৩৮ শতাংশ শেয়ার গ্রামীণ টেলিকমের কাছে এবং ৬২ শতাংশ ছিল টেলিনরের কাছে।

ডেগব্লাডেটকে ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘আমরা এখন আর টেলিনরকে ৩৫ শতাংশের নিচে আনতে বলছি না, ৫১ শতাংশ অংশীদারত্বে আমরা সন্তুষ্ট হব। এর জন্য টেলিনরকে পুরো মার্কেট প্রাইস দিতে প্রস্তুত আছি।’ এ দাবিটি এমন এক সময় ওঠে, যখন গ্রামীণফোনকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য চাপ তৈরি হয়েছিল। গ্রাহক ও আয় বিবেচনায় গ্রামীণফোন সে সময় দেশের বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর হিসেবেও আবির্ভূত হয়। ২০০৬ সালে অপারেটরটির সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ছিল এক কোটি এবং আয় ছিল ৭০ কোটি ডলার। কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফার মার্জিন ছিল ৪৩ শতাংশ।

২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘১৯৯৬ সালে কোম্পানি গঠনের আগে অংশীদারদের মধ্যে করা চুক্তি অনুযায়ী টেলিনর ছয় বছরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছিল। টেলিনর এখন আমাকে বলছে, তাদের কথার ওপর নির্ভর করা আমার ভুল ছিল।’

গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে ওই সময় শিশুশ্রম, অবৈধ ভিওআইপির ব্যবহার, সিম জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এমনকি জরিমানাও করা হয়। ড. ইউনূস তখন গ্রামীণ নামের অপব্যবহারের জন্য টেলিনরকে দোষারোপ করেন এবং অভিযোগ করেন, যে অবৈধ কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশী নিয়ন্ত্রক সংস্থা গ্রামীণফোনকে ৬০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে তা টেলিনরকে পরিশোধ করতে হবে। 

চুক্তির বিষয়টি স্বীকার করে টেলিনরের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, ‘টেলিনর ইউনূসের বিবৃতিতে বিস্মিত হয়েছে। ১৯৯৬ সালের চুক্তি বাধ্যতামূলক ছিল না। গ্রামীণফোনের মালিকানা দ্বন্দ্বে ইউনূসের সঙ্গে টেলিনর একমত নয় যে কোম্পানিতে অংশীদারত্ব বিক্রির জন্য চুক্তি আছে। এতে বলা হয়েছে, শেয়ারহোল্ডার চুক্তিতে নির্ধারিত মতপার্থক্য সুইডিশ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে।’

সে সময় ইউনূস বলেছিলেন, ‘আমি নরওয়ের জনমত আদালতের সামনে মামলাটি তুলে ধরছি।"আমি নিশ্চিত, নরওয়ের জনগণ এটা দেখবে, তাদের মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কোম্পানিগুলো তাদের লিখিত উদ্দেশ্যকে সম্মান করে, সব ক্ষেত্রেই এবং বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের দরিদ্র নারীদের সঙ্গে কাজ করে।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও টেলিনর প্রতিনিধির মধ্যে ২০০৮ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে দুই দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে ইতিবাচক ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছিল বলে জানায় টেলিনর। তখন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্রামীণফোনের মালিকানা নিয়ে ড. ইউনূস ও নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়ে টেলিনর বলেছিল, ‘অংশীদারত্ব তার (গ্রামীণ টেলিকম) কাছে বিক্রির চুক্তির বিষয়ে টেলিনর অসম্মত হয়েছে। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই, অংশীদারত্ব চুক্তি অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের অসম্মতি সুইডিশ কোর্টের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।’ 

গ্রামীণ টেলিকম সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণফোনে অংশীদারত্ব, সামাজিক ব্যবসা ও শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষ থেকে যা যা পদক্ষেপ নেয়ার কথা তার সবই গ্রামীণ টেলিকম করেছে। একসময় এ বিষয় নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে দুই পক্ষই একমত হয়েছে এবং কোম্পানি স্বাভাবিকভাবেই চলছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গ্রামীণ টেলিকম কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। 

ড. ইউনূসের সেই সংবাদ সম্মেলনের পর ১৬ বছর অতিবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নরওয়েতে যে দাবিতে ওই সংবাদ সম্মেলনটি করেছিলেন, তা এখনো পূরণ হয়নি। দরিদ্র ও ভূমিহীন নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক ব্যবসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রামীণফোনের যাত্রা শুরু হলেও সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে এর মধ্যে সরকারের সম্পদ ব্যবহার করে হয়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর। 

সামাজিক ব্যবসার প্রতিশ্রুতির বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যায় নরওয়ের কোম্পানি টেলিনর। বণিক বার্তাকে লিখিত বক্তব্যে টেলিনর এশিয়া জানায়, গ্রামীণফোন ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত রয়েছে। গ্রামীণফোনের প্রধান শেয়ারহোল্ডার টেলিনর, যার মালিকানায় রয়েছে ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ার। অন্যদিকে গ্রামীণ টেলিকমের (জিটিসি) কাছে রয়েছে ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং বাকি ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, গত ২৭ বছর টেলিনর ও জিটিসি যৌথভাবে গ্রামীণফোন, টেলিযোগাযোগ শিল্প এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে। প্রতিদিন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে আধুনিক কানেক্টিভিটি সেবা পৌঁছে দিতে পেরে আমরা গর্বিত।"

টেলিযোগাযোগ খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামীণফোন ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর পর সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে রেলওয়ের ফাইবার কেবল এককভাবে ব্যবহারের সুযোগ। এ সময় সিটিসেল, ওয়ারিদ, রবি, একটেল, বাংলালিংকসহ টেলিকম খাতের অনেক অপারেটর কার্যক্রমে এলেও গ্রামীণফোনের মতো সুযোগ পায়নি কেউ। এ সুযোগের ফলে কোম্পানিটি সবচেয়ে বড় অপারেটর হয়ে উঠতে পেরেছে। 

রেলওয়ের ডার্ক ফাইবার অপটিক্যাল কেবল ব্যবহার বিষয়ে ১৯৯৭ সালে গ্রামীণফোন ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ২০ বছর পর্যন্ত এ কেবল ব্যবহারের সুযোগ পায় গ্রামীণফোন। কিন্তু পরে ফাইবার পরিবর্তনের সময় নতুন চুক্তি হয়। চুক্তির মেয়াদ আগামী ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। 

২০১৬ সাল পর্যন্ত কোনো অপারেটর এ কেবল ব্যবহারের সুযোগ পায়নি। ২০১৬ সালে ৪১২ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার লিজ প্রদানের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। সে সময় ৪১২ কিলোমিটারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটারের ফাইবার আইনগত জটিলতার কারণে গ্রামীণফোনের কাছেই থেকে যায়। 

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ইজারা চেয়ে ২০১৫ সালের নভেম্বরে রেলওয়েকে চিঠি দেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। চিঠিতে বলা হয়েছে, রেলওয়ের অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করতে পারলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো সহজ হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের চিঠির পরই মূলত অন্য অপারেটরদের জন্য রেলওয়ের অপটিক্যাল ফাইবার ইজারা দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

২০২২ সালে বাহন লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন, বাংলালিংক, রবি ও ফাইবার অ্যাট হোমকে লিজ দেয়া হয়। চুক্তির আওতায় বাহন ১ হাজার ৬৮৩ কিলোমিটার, সামিট কমিউনিকেশন ৮৯৫ কিলোমিটার, বাংলালিংক ৫৯৫ কিলোমিটার, রবি ২৮০ কিলোমিটার, ফাইবার অ্যাট হোম ১৭৭ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক্যাল কেবল ব্যবহারের সুযোগ পায়। এর মাধ্যমে ১৭৭ কোটি টাকা আয়ের সুযোগ তৈরি হয় রেলওয়ের।

গ্রামীণফোনের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে কোম্পানিটি ১৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা আয় করেছে। এ সময়ে কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গ্রামীণফোনের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫৯ কোটি টাকায়। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার ৩৩৭ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন