কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বেড়েছে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরছেন জেলেরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

মৌসুম শুরুর দিকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ কিছুটা আহরিত হলেও এবার তা বেড়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে মাছ শিকার শুরুর পর ক্রমাগত আহরণের পরিমাণ বাড়ছে। গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমের প্রথম মাসেই মাছ অবতরণ বাজারজাত বেড়েছে। বিপণন কর্মকর্তা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মৌসুমে হ্রদে মাছ আহরণ উৎপাদন ঊর্ধ্বমুখী।

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন বিপণন কেন্দ্রের তথ্যমতে, এক মাসে প্রায় হাজার ৯৪৩ টন মাছ বিপণন কেন্দ্রে অবতরণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে রাজস্ব এসেছে কোটি ৯৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ২০২৩-২৪ মৌসুমের প্রথম মাসে হাজার ৯২৫ টন মাছ আহরিত হয়েছিল। তখন প্রথম মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল কোটি ৯৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। গত মৌসুমের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমের প্রথম মাসেই ১৭ টন মাছ আহরণ লাখ ৩৭ হাজার টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন বিপণণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমের শুরুর দিকে আবহাওয়া কিছু সংকটের কারণে বিপণন কেন্দ্রের পন্টুনগুলোয় মাছের অবতরণ ছিল তুলনামূলক কম। আমরা ওই সময়ে আশানুরূপ মাছ পাইনি। তবে বছর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত হ্রদে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে, যা অন্যান্য বছরে হয়নি। এটা মাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। চলতি মৌসুমের প্রথম মাসে বিগত মৌসুমের প্রথম মাসের চেয়ে মাছ অবতরণ শুল্ক আদায় দুই- বেড়েছে। আমরা আশাবাদী, এবার মৌসুমজুড়ে মাছ আহরণ করা যাবে এবং বিগত মৌসুমের চেয়ে এবার মাছ আহরণের পরিমাণ বাড়বে। বিএফডিসির লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।

প্রচলিত রীতি অনুসারে প্রতি বছরের মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। সময় হ্রদের মাছ বাজারজাতসহ স্থানীয় বরফ কলগুলোও বন্ধ রাখা হয়। যদিও চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের ছয়দিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও হ্রদে পানি পর্যাপ্ত না বাড়ার ফলে প্রথম দফায় ১৫ দিন দ্বিতীয় দফায় ২৩ দিনসহ এক মাস সাতদিন সময় বর্ধিত করা হয়।

বিএফডিসির বিপণন কর্মকর্তা মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি ২০২৪-২৫ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের শুরুর দিকে হ্রদে পর্যাপ্ত পরিমাণের চেয়েও বেশি (মাত্রাতিরিক্ত) পানি থাকায় কম মাছ ধরা পড়েছে। তবে হ্রদের পানি কিছুটা কমতে থাকায় মাছের আহরণের পরিমাণ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকার সুবাধে এবার মাছের উৎপাদন আহরণ বাড়বে বলেও জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে হ্রদ থেকে মাছ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা হাজার টন। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম মাসেই দুই হাজার টনের কাছাকাছি মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০২০-২১ মৌসুমে হাজার ৭৯৪ টন, ২০২১-২২ মৌসুমে হাজার ৫২৩, ২০২২-২৩ মৌসুমে হাজার হাজার ৪৯০ এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ মৌসুমে হাজার ৬২৭ টন মাছ বাজারজাত হয়েছিল।

কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বাজারজাত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যেই বছর আহরণ শুরুর প্রথম মাস কেটেছে। শুরুর দিকে হ্রদে পানি বেশি থাকায় মৌসুমজুড়ে মাছ ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। আগের চেয়ে এখন মাছের বাজারজাত শৃঙ্খলার মধ্যে এসেছে। দেখা গেছে আগে সারা রাত মাছ বিএফডিসির পন্টুনে আনা হতো, এখন সন্ধ্যা -৭টার পর ল্যান্ডিং (অবতরণ) বন্ধ। এতে পরিবহন বাজারজাতে শৃঙ্খলার পাশাপাশি মাছ নষ্ট হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন