অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংলাপ

অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফা সংলাপের শুরুতে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ছবি: পিআইডি

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের মাধ্যমে অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করেছে দলটি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংলাপকালে দলটি এ অবস্থান তুলে ধরে। 

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে তৃতীয় দফায় সংলাপে বসল অন্তর্বর্তী সরকার। প্রথম দিনের সংলাপে বিএনপির পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা চলে বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। 

বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

সংলাপ শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন কবে নির্বাচন করবে, সে ব্যাপারে একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি। আমরা এনআইডি কার্ড, যেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করতে আইন করা হয়েছিল, সেটা অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাতিল করতে বলেছি। বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনে জায়গা না পায়, সেকথা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমরা বলেছি, ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে হবে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেসব প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারের অধীনে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার অভিযোগ আছে, তাদের আইনের আওতায় আনার কথাও বলেছি।’

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে সংবিধান ধ্বংস ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ‘মূল হোতা’ অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তোলা হয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের অনেক দোসর কর্মরত আছেন। তাদের অপসারণ, জেলা প্রশাসক নিয়োগে নতুন ফিট লিস্ট এবং যেসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করার কথা বলেছি। 

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে দু-একজন আছেন, যারা বিপ্লব ও গণ-অভ্যুত্থানের যে মূল স্পিরিট, তা ব্যাহত করছেন। আমরা তাদের সরানোর কথা বলেছি।’

বিচার বিভাগের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলেছি, হাইকোর্ট বিভাগে এখনো পরিবর্তন আনা হয়নি। হাইকোর্ট বিভাগে বেশির ভাগ নিয়োগই দলীয়। তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি। দলকানা কিছু বিচারক আছেন, তাদেরও অপসারণের কথা বলেছি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের অনেককে জামিন দেয়া হচ্ছে, এটা উদ্বেগজনক। এ বিষয়টা আমরা দেখার জন্য বলেছি।’

এদিকে প্রথম দিনের সংলাপের পর সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সেখানে নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে কথা বলেন তিনি। প্রেস সচিব বলেন, ‘‌নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়ে ছয়টি কমিশন দেশের রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলবে। তিন মাসের মধ্যে তারা একটা রিপোর্ট দেবে। এরপর তাদের রিপোর্ট নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আবার রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে বসবে। সেখানে সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা ঐকমত্যে পৌঁছানো হবে। এ ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করবে (নির্বাচনী) টাইমলাইনটা। প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কার্যক্রম একসঙ্গে চলবে।’ 

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘‌সব দলই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিজেদের সরকার বলে মনে করছে। তারা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার ব্যাপারে দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনের রোডম্যাপের ব্যাপারে কথা এসেছে। সেখানে আলোচনা হয়েছে কমিশনগুলোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে কীভাবে রাষ্ট্রের সংস্কারগুলো ঢেলে সাজানো হবে এবং সেটার সমান্তরালে কীভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম বা প্রস্তুতি চলমান থাকবে।’


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন