বিবিসির বিশ্লেষণ

মধ্যপ্রাচ্য কী সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে?

বণিক বার্তা ডেস্ক

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দাহিয়েহ শহরে গতকালও বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল ছবি: এপি

হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান হামলা, পাল্টাহামলার মধ্যে গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন, লেবাননে ইসরায়েল স্থল অভিযান শুরু করেছে এবং ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ইরান প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। জি-৭ গ্রুপ সব পক্ষকে ‘সংযত’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব প্রচেষ্টা সফল হয়নি। বরং মধ্যপ্রাচ্য আগের চেয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধের আরো বেশি কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। খবর বিবিসি।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ বৈরুতে সূর্যাস্তের সময় এক বিমান হামলায় হাসান নসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। ভূগর্ভস্থ একটি বাংকারকে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়। এর আগে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে সপ্তাহজুড়ে ইসরায়েলের চালানো হামলায় ৫০০ জন নিহত হন। এর এক সপ্তাহ আগে লেবাননভিত্তিক গোষ্ঠীটিকে লক্ষ্য করে অসংখ্য ওয়াকিটকি ও পেজার বিস্ফোরণে ৩২ জন নিহত ও তিন হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত কমার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, তা নসরাল্লাহর মৃত্যুতে অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে যুক্তরাষ্ট্রের ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন জানান, তারা যেকোনো প্রস্তাব বিবেচনা করতে প্রস্তুত।

কিন্তু হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘ থেকে দেশে ফেরার উদ্দেশে রওনা হন। এতে দীর্ঘস্থায়ী কূটনৈতিক প্রত্যাশা ম্লান হয়ে যায়। 

হিজবুল্লাহ প্রধানকে হত্যার তিনদিন পর সোমবার রাতে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানায়, তাদের অভিযান হবে ‘সীমিত ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে’।

লেবাননের ক্রাইসিস ইউনিটের তথ্যমতে, স্থল অভিযানের কারণে প্রায় ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অন্তত আট ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে। ইসরায়েল বলছে, সীমান্তে হিজবুল্লাহর রকেট ও ড্রোন হামলার সক্ষমতা বন্ধ করতেই এ অভিযান চালানো হয়। বর্তমানে ইসরায়েলি সেনারা একই সঙ্গে গাজা ও লেবানন উভয় ফ্রন্টে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এ ঘটনা গত কয়েক দশকেও ঘটেনি।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইসরায়েলে প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। তখন প্রায় এক কোটি ইসরায়েলি নাগরিককে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এর জবাব দিতে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ মিত্র দেশগুলো হামলা প্রতিহতে সমর্থন জানায়। এতে সংঘাত আরো বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

আইডিএফ বলেছে, বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়। তবে অল্পসংখ্যক ইসরায়েলের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে একমাত্র ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে।

লেবাননের সবচেয়ে বড় মিত্র ইরান। মিত্রের সংকটময় অবস্থায় ইরান হিসাবনিকাশ করে আগের যেকোনো সময়ে শক্তিশালী লক্ষণীয় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে অঞ্চলে নিজেদের সক্ষমতার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দৃষ্টান্ত তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে পূর্ব সতর্কবার্তা ছাড়াই বড় পরিসরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র চালাতে পারে ইরান। তবে নিছক প্রদর্শনের চেয়ে বড় আকারে হামলা চালালেও ইরানের সর্বাত্মক যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়নি, যা বেশ বিস্ময়কর ঘটনা। ইরান অবশ্য বুঝতে পেরেছে যে সর্বাত্মক যুদ্ধে গেলে তাদের হারতে হবে। এর থেকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র পতনের সূচনাও হতে পারে।

হিজবুল্লাহ লেবাননে লড়াই অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইসরায়েলের পক্ষে লেবাননে প্রবেশ করা সহজ, তবে সেখান থেকে বের হওয়া তাদের জন্য কঠিন। মঙ্গলবার থেকে মধ্যপ্রাচ্যের অঞ্চলটি ও বিশ্বে ইরানের হামলার জবাবে ইসরায়েল কী প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা নিয়ে অত্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, প্রতিশোধের অংশ হিসেবে তিনি ইরানের পরমাণু বা জ্বালানি তেলের স্থাপনায় হামলা চালাতে ইসরায়েলকে নিরুৎসাহিত করেছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে চলমান সংঘাতে বেশ কয়েকটি পক্ষ মনে করছে, তাদের এক্ষেত্রে সম্পৃক্ততা রয়েছে। যেভাবে গাজায় যুদ্ধ নাটকীয় রূপ নেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন