বিশ্বজুড়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে ফ্যাক্ট-চেকিং খাত

বণিক বার্তা ডেস্ক

ফ্যাক্ট চেকাররা নির্ভুল তথ্যের উৎস হিসেবে সমাদৃত ছবি: নিক্কেই এশিয়া

সরকার ও রাজনীতিবিদদের সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশ ও আর্থিক টানাপড়েনে বিশ্বজুড়ে ফ্যাক্ট-চেকিং খাত চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমছে। এ অবস্থায় মানুষের নির্ভুল তথ্য পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস হুমকির মুখে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর নিক্কেই এশিয়া।

ফ্যাক্ট-চেকাররা প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানা উপায়ে প্রকাশিত কিংবা অপ্রকাশিত তথ্যের নির্ভুলতা যাচাই করেন। ২০০০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান ছিল ২০টিরও কম। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোট ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এ সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এরপর কভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর অনলাইনে তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকায় ফ্যাক্ট-চেকারদের সংখ্যাও বাড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ অনুসারে, ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ৪৫৭-তে পৌঁছায়। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে কমে তা ৪৩৯টিতে দাঁড়িয়েছে, যা বছরভিত্তিক হিসাবে ৩ শতাংশ কম। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় কমেছে। তবে অন্যান্য অঞ্চলে অপরিবর্তিত।

২০১৯ সালে নতুন প্রতিষ্ঠিত ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৯১। গত বছর এ সংখ্যা মাত্র ১০টিতে নেমে আসে। এ সময় বছরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার সংখ্যা ১০-২০টির মধ্যে ওঠানামা করেছে। ফলে ২০২৩ সালে প্রথম নতুন প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে যায়।

ফ্যাক্ট-চেকিং খাত চ্যালেঞ্জিং সময় পার করার প্রধান কারণ আর্থিক টানাপড়েন। কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠান তহবিল সংগ্রহ এবং কর্মী নিয়োগে সমস্যার কারণে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্কের (আইএফসিএন) জরিপে দেখা গেছে, সংস্থাটির ১৩০-এর বেশি সদস্যের মধ্যে ৮৪ শতাংশই তহবিল ও আর্থিক স্থায়িত্বকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

মুসাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাংবাদিকতা বিশেষজ্ঞ নোবুয়ুকি ওকুমুরা বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। কারণ সে সময় থেকে অনলাইনে তথ্য যাচাইয়ের চাহিদা কমছিল।’

রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের রোষানলে পড়েও বেশকিছু ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। জুনে আইএফসিএনের বার্ষিক অধিবেশনের সময় জর্জিয়ার একটি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বলেন, ‘(রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিরা) প্রতিদিন স্প্রে পেইন্ট দিয়ে আমাদের অফিস ও কিছু গাড়ির ক্ষতিসাধন করেছে।’ 

ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের মে মাসের প্রতিবেদনে সরকার ও রাজনীতিবিদদের সমালোচনার কারণে সৃষ্ট বৈরী পরিবেশকে ফ্যাক্ট-চেকারদের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয় ফ্যাক্ট-চেকাররা অকথ্য ভাষায় ই-মেইল পাঠানো, শারীরিক হুমকি ও মামলাসহ নানা ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন