কেপলারের পূর্বাভাস

আগামী বছরও অব্যাহত থাকবে জ্বালানি তেলের উদ্বৃত্ত সরবরাহ

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস

জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক প্লাস আগামী বছরের জন্য জ্বালানি তেল উত্তোলনের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তা সত্ত্ব্বেও ২০২৫ সালে চাহিদার তুলনায় উত্তোলন বেশি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলার। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম আরো কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ও অয়েল প্রাইস। 

কেপলারের বিশ্লেষক হোমায়ুন ফালাকশাহি বলেন, ‘শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশ চীনে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে গেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদাও নিম্নমুখী। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। কেননা জ্বালানি তেলের অন্যতম বৃহৎ উত্তোলক লিবিয়ায় উত্তোলন কমে গেছে।’ 

ফালাকশাহী জানান, গ্রীষ্মকালে জ্বালানি তেলের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিন ও মধ্যম পর্যায়ের জ্বালানির মজুদ বেড়েছে, যা তেলের দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, ‘২ সেপ্টেম্বর গ্রীষ্মকাল শেষ হয়ে গেছে। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা স্বাভাবিক মৌসুমি প্রবণতার ধারাবাহিকতায় কমে থাকতে পারে।’ 

অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ ও বেচাকেনায় স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে জ্বালানি তেলের দাম সংশোধনের সময় এসেছে। বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ কমাতে উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দুই মাস পিছিয়ে দিয়েছে ওপেক প্লাস। এতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়তে পারে। তাদের মতে, এ সিদ্ধান্ত সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য খারাপও হতে পারে। কেননা এটা নির্দেশ করে, বাজারে সরবরাহ হওয়া ওপেকের জ্বালানি তেল ব্যবহারের পূর্ণ সক্ষমতা অর্থনীতিতে অনুপস্থিত। 

ফিলিপ নোভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াংকা সচদেভা বলেন, ‘মার্কিন জ্বালানি তেলের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় ডব্লিউটিআই ও ব্রেন্ট উভয় বেঞ্চমার্কই কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। এ অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৫ শতাংশ তেল উৎপাদনের জন্য দায়ী এবং উৎপাদনে যেকোনো বিঘ্ন স্বল্পমেয়াদে সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।’ 

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৭০ ডলারের নিচে নেমে যায়। গত বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববাজারে মার্কিন জ্বালানি তেলের আদর্শ ডব্লিউটিআইয়ের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৬৭ দশমিক ৬৮ ডলার। ২০২১ সালের পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অপ্রত্যাশিতভাবে এমন ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) প্রধান ফাতিহ বিরল বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম আরো কমতে পারে। কারণ উত্তোলক দেশগুলো এখনো বৈশ্বিক চাহিদার তুলনায় বেশি তেল উত্তোলন করছে।’ তিনি জানান, চাহিদা কমে যাওয়া এবং আমেরিকা ও অন্যান্য ওপেক-বহির্ভূত দেশগুলো থেকে সরবরাহ বাড়ায় দামের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল হারে উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনা পিছিয়ে দিয়েছে ওপেক প্লাস। আইইএর সর্বশেষ মাসিক জ্বালানি তেল বাজারসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের প্রথম ছয় মাসে জ্বালানি তেলের চাহিদা কভিড-১৯ মহামারীর পর সবচেয়ে ধীরগতিতে বেড়েছে। 

ফাতিহ বিরল বলেন, ‘জ্বালানি তেলের বাজারের ধীরগতির মূল কারণ চীন। গত দশকে বৈশ্বিক জ্বালানি তেল চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ চীন থেকে এসেছে। এখন চীনের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় দেশটিতে চাহিদা কমেছে।’ 

এছাড়া পরিবেশবান্ধব বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধিও জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদাকে প্রভাবিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির ব্যাপক ব্যবহার ও জ্বালানি দক্ষতার উন্নতি ঘটেছে। ফলে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে কমে গেছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন