বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় হাজারো রোহিঙ্গা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I কক্সবাজার

টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গা পরিবার ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকায় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাত তীব্র হয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে মর্টার শেল, গ্রেনেড ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দ প্রতিনিয়ত ভেসে আসছে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। এছাড়া সংঘাতের মধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা। এরই মধ্যে গত কয়েক দিনে প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। আরো হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্যে সীমান্তে জড়ো হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত মঙ্গলবার জানান, সম্প্রতি আট হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তার এ বক্তব্যের চারদিনের মাথায় আরো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা সামনে এল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা জানান, রাতের অন্ধকারে মংডু টাউনশিপের ফয়েজিপাড়া, সিকদারপাড়া ও নুরুল্লাপাড়া থেকে নৌকা নিয়ে রোহিঙ্গারা নাফ নদী অতিক্রম করছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে টেকনাফের জাদিমুরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, মিস্ত্রিপাড়া, খুরের মুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, ঘোলারচর ও বাহারছড়া উপকূল দিয়ে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, শুক্রবার রাতে প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। এর মধ্যে কেরুনতলির এক বাড়িতে আশ্রয় নেয় ১৫ শিশু, নয় নারীসহ চার পরিবারের ৩০ সদস্য। তাদের বাড়ি মংডু টাউনশিপের পাশের গ্রাম সুদাপাড়ায়। তাদের দুজন জাহেদা বেগম (৩৫) ও নূরজাহান (৪০) জানান, সাত-আটদিন ধরে মংডুতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। যুদ্ধে উভয় পক্ষ গ্রেনেড ও মর্টার শেলের পাশাপাশি ড্রোন ব্যবহার করছে। যুদ্ধবিমান থেকেও বোমা ফেলা হচ্ছে। এতে অনেক মানুষ হতাহত হচ্ছে।

তারা আরো জানান, রোহিঙ্গাদের অনেক বসতি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে তাই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছে। তবে নৌকার অভাবে বাংলাদেশে ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে।

টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা সামী জাবেদ বলেন, ‘ছয় মাস ধরে রাখাইনে যুদ্ধ চলছে, যার প্রভাব পড়েছে এপারে। আমরা আতঙ্কে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।’

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিজিবি ও কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরই মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। অনেক রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে ঢোকার জন্য। তাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা উচিত।’

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপার থেকে প্রায়ই বিস্ফোরণের শব্দ আসছে। টেকনাফ সীমান্তের মানুষের কাছে বিস্ফোরণের আওয়াজ স্বাভাবিকভাবে নেয়া ছাড়া আর উপায় নেই। তবে মানুষকে সবসময় সচেতন রাখা হচ্ছে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদী থেকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।’

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরগুলোয় নতুন করে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে। সম্প্রতি কতজন ঢুকেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন