অপরিবর্তিত রিজার্ভ বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটেছে। চলতি আগস্টের প্রথম ২০ দিনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৩ কোটি বা ১ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে ২০২৩ সালের এ সময়ে প্রবাসীরা ১১২ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন। সে হিসাবে চলতি আগস্টে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ শতাংশেরও বেশি। দেশে ২০ আগস্ট একদিনেই এসেছে প্রায় ১১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রেমিট্যান্সের বড় প্রবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। চলতি মাসে দেশের রিজার্ভ অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৩১ জুলাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (বিপিএম৬) অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২১ আগস্টে এসেও তা একই অবস্থায় রয়েছে। অথচ জুলাইয়ে রিজার্ভ থেকে ১৩০ কোটি বা ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার ক্ষয় হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গভর্নর হিসেবে ড. আহসান এইচ মনসুর যোগদানের পর ডলারের বিনিময় হার বাড়ানো হয়েছে। এখন ব্যাংক খাতে প্রতি ডলার ১২০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এ কারণে রিজার্ভের ক্ষয় আপাতত বন্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে না। তাছাড়া প্রবাসীরাও আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি আগস্টের প্রথম তিনদিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ ওই সময় প্রতিদিন মাত্র ৩ কোটি ডলার করে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ৪ থেকে ১০ আগস্ট প্রবাসীরা ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আর ১১ থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহে পাঠান ৬৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার। সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট একদিনেই প্রবাসীরা ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান।

দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। গত অক্টোবর থেকে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রবৃদ্ধির ধরায় ছিল। এর মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে প্রতি মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কিন্তু জুলাইয়ে এসে সে প্রবাহে বড় ধরনের ধাক্কা খায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত ১৬ জুলাই দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আন্দোলন দমাতে ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি, দেখামাত্র গুলির মতো নজিরবিহীন দমন-পীড়ন চালানো হয়। দেশে সংঘটিত সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ, আমেরিকার কয়েক দেশে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রবাসীরা সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন। এসব সমাবেশ থেকে রেমিট্যান্স ‘শাটডাউনের’ ঘোষণা দেয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর আগে জুনে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ৬৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার কম আসে। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্স কমে যায় প্রায় ২৫ শতাংশ। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবারো তা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লম্ফন হওয়ায় দেশের খুচরা বাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলারের দর স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। ব্যাংকে প্রতি ডলার ১২০ টাকায় লেনদেন হলেও কার্ব মার্কেটে ডলার মিলছে ১২১-১২২ টাকায়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২ হাজার ৩৯১ কোটি বা ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠান। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন