কক্সবাজারে ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পাহাড়ধসের শঙ্কা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, কক্সবাজার

ভারি বর্ষণে কক্সবাজারে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

কক্সবাজারে ভারি বর্ষণ অব‍্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পাহাড়ি ঢল। জেলার শতাধিক গ্রামে পানি প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ফের বন্যার আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে পাহাড়ধসের আশঙ্কা।

বৃষ্টির কারণে পর্যটন এলাকা কলাতলী, পৌর এলাকার অধিকাংশ ওয়ার্ড, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, ঈদগাঁও, সদরের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে বীজতলা, পানের বরজ ও সবজি খেত। এরই মধ্যে জেলা শহর ও উপজেলাগুলোর লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। বাঁকখালী এবং মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, টেকনাফে দুদিনের ভারি বর্ষণে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধলাখ মানুষ। অনেকের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

বুধবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টিতে টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ সদর , বাহারছড়া শামলাপুর, সাবরাং ইউনিয়নের অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। বিশেষ করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী, লেদা ও হোয়াব্রাং এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

রঙ্গিখালী লামারপাড়ার মামুনুর রশিদ জানান, আধা ঘণ্টা বৃষ্টি হলে ডুবে যায় ঘরবাড়ি। এভাবে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে চার-পাঁচবার দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বাড়ির ভেতরের আসবাবসহ সবকিছু পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। তাদের কষ্টের কথা কেউ শোনে না। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা শুধু আশ্বাস দিয়ে চলে যান।

একই এলাকার গৃহিণী শাকেরা বেগম জানান, লামারপাড়ায় যারা বসবাস করে, তারা সবাই পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। এটা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ঘরের জিনিসপত্র ওপরে তুলে রাখা হয়। বাড়ির ভেতর দুই ফুট পানি উঠে ফ্রিজসহ অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে আর থাকতে চান না, বাড়িঘর বিক্রি করে চলে যাবেন তারা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৮৮-৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে কক্সবাজারে অতিভারি বর্ষণ শুরু হয়। এ কারণে শহর ও কলাতলীতে পানি বেড়েছে। বিকাল থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় মাইকিং করা হয়েছে। পৌর এলাকায় যারা পানিবন্দি ও পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। যারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছেন তাদের সংশ্লিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসার অনুরোধ করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন