গল্প যখন পথ চেনে না

আসরার আবেদিন

ছবি: নেটফ্লিক্স

ভারতের অন্যান্য সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় বলা যায় বেশ পিছিয়েই বর্তমান বলিউড। বলিউডের এমন দুঃসময়ে কিছু সিনেমার অযাচিত সিকুয়াল যেন দর্শককে বাধ্যই করছে সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে। বলিউডের সিনেমা বক্স অফিসে ভালো করতে না পারায় নির্মাতা, প্রযোজকরা ঝুঁকেছেন সিকুয়ালের দিকে। তাদের ধারণা, সিকুয়াল করলেই মনে হয় তা ভালো করবে। বাস্তবে বহু সিকুয়ালই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ঠিক এমন ভুলই করেছে নেটফ্লিক্স। ‘ফির আয়ি হাসিন দিলরুবা’ সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। 

২০২১ সালে তার নির্মিত রোমান্টিক ড্রামা, থ্রিলার গল্পের সিনেমা ‘হাসিন দিলরুবা’। মুক্তির পরই কুড়িয়েছে দর্শকের ভালোবাসা। সিনেমার গল্প, প্লট, ক্লাইম্যাক্সের টুইস্ট সব মিলিয়ে হাসিন দিলরুবা মনে ধরেছিল দর্শকের। অবশ্য এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। রানির মনোভাব, তার কার্যকলাপ অনেকের মনেই প্রশ্ন তুলেছে, বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে সিনেমাটি দর্শকের মধ্যে তৈরি করেছিল আলোচনা। একের পর এক মিম, শর্টস তৈরি হয়ে সিনেমাটি ভালো বাজার পেয়েছিল। নির্মাতারা হয়তো সেখানেই থেমে যেতে পারতেন। কিন্তু গত বছরই ঘোষণা আসে সিনেমার সিকুয়াল আসছে। অপেক্ষায় ভক্তরা। 

সিনেমা এল। আবার এলেন হাসিন দিলরুবা। কিন্তু শেষমেশ এটি হতাশ করেছে ভক্তদের। এর চিত্রনাট্য নিয়েও হয়েছে সমালোচনা। সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই ছিল সাসপেন্স, সিকুয়ালে যা ছিল প্রেডিক্টেবল। ফলে ২ ঘণ্টা ১৩ মিনিট একেবারেই সময় নষ্ট বলছে দর্শক। প্রথম অংশের মতো সিনেমার প্লট জমাতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই দর্শকের মনে ধরেনি সিকুয়ালটি। এর গল্প রানি সাক্সেনা (তাপসী পান্নু) ও ঋষভ সাক্সেনাকে (বিক্রান্ত স্যামি) নিয়ে এগিয়েছে। তারা স্বামী-স্ত্রী। 

হাসিন দিলরুবায় গল্প যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকেই শুরু হয়েছে এবারের গল্প। রানি তার সংসার বাঁচাতে খুন করেছিল প্রেমিক নীল ত্রিপাঠিকে (হর্ষবর্ধন রানে)। এ প্রক্রিয়ায় কাটা পড়েছিল ঋষভের হাত। যে হাত পুড়ে গেছে আগুনে। ব্যস সে পোড়া হাত নিয়েই রানি-ঋষভ গল্প সাজিয়েছে নিজের মতো। পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আগ্রায়। কিন্তু পুলিশ থেকে বাঁচতেই দূরে দূরে থাকে তারা। সিকুয়ালে সাদামাটা গল্পে অভিমন্যু পণ্ডিতের (সানি কোশিক) এন্ট্রি কিছুটা টুইস্ট নিয়ে আসে গল্পে। রানির প্রেমে পড়েছে অভিমন্যু।

এ প্রেমিকের হাত ধরেই চেষ্টা পুলিশ থেকে বাঁচার। এভাবে খুব ধীরগতিতে এগিয়েছে সিনেমার গল্প। এ সিনেমা কেবল চিত্রনাট্যের জন্যই নয়, সেই সঙ্গে এ সিনেমা জমে ওঠেনি বিক্রান্ত ও তাপসীর দুর্বল কেমিস্ট্রির ফলে। দুজনের অভিনয় দেখে মনে হওয়ার জো নেই, এরা একজন অন্যজনের জন্য খুনও করতে পারে। কারণ দুজনেরই অভিনয় ছিল এভারেজ। তবে প্রশংসনীয় তাপসীর লুক। তাপসী এ সিনেমায় অভিনয়ের চেয়েও অনেক বেশি লুক আর স্টাইলিংয়ে সময় দিয়েছেন বলেই মনে হবে। 

এদিকে বিক্রান্ত অভিনয়ে দুর্দান্ত। তবে এ সিনেমায় নিজের সেরাটা দিতে পারেননি বলেই মনে হয়েছে। বলা যায়, নিজেকে যথাযথ ফুটিয়ে তুলতে কিছুটা ব্যর্থই হয়েছেন অভিনেতা বিক্রান্ত। সে জায়গা থেকে সহযোগী চরিত্র হলেও দর্শক প্রশংসা পেয়েছেন সানি। সিনেমার গল্প অনুযায়ী, বিভিন্ন শেডে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। অভিমন্যু পণ্ডিত একেবারে সিনেমার শেষ দৃশ্য পর্যন্ত তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে গল্পের টুইস্ট ধরে রাখতে পেরেছিল। যেহেতু তাপসী ও বিক্রান্তকে নিয়ে এর মূল গল্প এগিয়েছে, তাই সানির ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে দর্শকের মনে দাগ কাটেনি এ সিকুয়াল। গল্পটা নিজের পথই চিনতে পারেনি।

আরো অনেককারণ আছে এ সিনেমা ব্যর্থ হওয়ার। প্রথমত, সিনেমা যেভাবে সাজানো হয়েছে তা দর্শকের পছন্দ হয়নি। এ গল্প নিয়ে তাদের অভিযোগ তো আগেও ছিল, সময়ের সঙ্গে এ জাতের গল্পের প্রতি এসেছে বিরক্তি। দ্বিতীয়ত, নির্মাণে এমন কিছু ছিল না যা দর্শকের ভালো লাগতে পারে। গড়পড়তা চিত্রনাট্য আর সে রকমই সিনেমাটোগ্রাফি। সাসপেন্সও এমন কিছু ছিল না, যা দর্শককে টানবে। তৃতীয় ও সবচেয়ে বড় কারণ মূলত সময়। ২০২০-২১ সালে ওটিটিতে আসা মাঝারি মানের সিনেমাও সাড়া ফেলত, কেননা লকডাউনে মানুষের অবসর ছিল বেশি। ওটিটিতে তারা সময় দিত। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে তারা আর ওটিটিতে মুগ্ধ নয়। যেনতেন একটা কাজ দিলেই তা প্রশংসা করে না। জয়প্রদ দেশাই বিষয়টি মাথায় রাখেননি। হয়তো ভেবেছিলেন, প্রথম সিনেমার জোরেই এটা উতরে যাবে। কিন্তু তা হলো না। সিনেমাটি হয়ে থাকল অকারণ নির্মিত একটি কনটেন্ট।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন