সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি নবায়ন

খুলনায় বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ জেলেদের

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ, কাঁকড়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন জেলেরা। মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় জুন-আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ রেখেছিল বন বিভাগ। ১ সেপ্টেম্বর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। তবে বনে প্রবেশের অনুমতিপত্র (বিএলসি) নবায়ন করতে হচ্ছে জেলেদের। এক্ষেত্রে ১৫ টাকা পর্যন্ত রাজস্ব নির্ধারণ করলেও বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তা ৬০০-১২০০ টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ জেলেদের। অতিরিক্ত টাকা না দিলে বিএলসি নবায়ন করা হয় না বলেও জানান তারা।

বন বিভাগের দেয়া তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনের নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন থেকে ১ সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত ৮৪৩টি জেলে নৌকার অনুমতিপত্র নবায়ন হয়েছে। কোবাদক স্টেশন থেকে ৮৮০টি, বানিয়াখালী স্টেশন থেকে ৫১১টি, কালাবগী স্টেশন থেকে ৫০৫টি, ঢাংমারী স্টেশন থেকে ৪৩০টি ও কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন থেকে ৮৭৫টি জেলে নৌকার অনুমতিপত্র নবায়ন হয়েছে।

তবে জেলেরা জানান, জেলেদের বেশির ভাগ মাছ ও কাঁকড়া আহরণের নৌকার ধারণক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে ৭৫ মণ হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সরকারি মূল্য অনুযায়ী প্রতিটি নৌকায় রাজস্ব দাঁড়ায় ৪৫-৫০ টাকা। অথচ আদায় করা হয় ৬০০-১২০০ টাকা। সুন্দরবনের কালাবগী স্টেশন কর্মকর্তা ইস্তিয়াক রহমান, নলিয়ান স্টেশন কর্মকর্তা তানজিলুর রহমান, বানিয়াখালী স্টেশন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, কোবাদক স্টেশন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা মোহসীন আলী প্রতিটি অনুমতিপত্রের জন্য ১০০০-১২০০ টাকা আদায় করছেন। আর কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল নিচ্ছেন ৬০০ টাকা।

অবস্থানগত কারণে খুলনার নয়টি উপজেলার মধ্যে সর্বদক্ষিণের সুন্দরবনঘেরা কয়রার বেশির ভাগ মানুষই সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। এ উপজেলার হড্ডা গ্রামের বনজীবী নেপাল মিস্ত্রি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের অধিকাংশ নৌকার অনুমতিপত্র নেয়া হয়েছে সুন্দরবনের নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন থেকে। প্রতিটি অনুমতিপত্রের জন্য আমাদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে নিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।’

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন থেকে বনে প্রবেশের অনুমতিপত্র নবায়ন করেছেন কয়রা উপজেলার জেলে শহিদুল ইসলাম, গফুর সরদার, কামরুল ইসলাম ও শহিদুল গাজী। তারা জানান, কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন থেকে বিএলসি নবায়নে প্রতিটি নৌকার জন্য ৬০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে।

সরকার নির্ধারিত রাজস্বের বাইরে অতিরিক্ত টাকার বিষয়ে বনজীবীরা জানান, মামলায় জড়িয়ে হয়রানির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন বনরক্ষী কর্মকর্তারা। তাছাড়া বন কর্মকর্তারা যে টাকা চান, তা না দিলে বনের মধ্যে হয়রানির শিকার হতে হয়। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার ও কাঁকড়া ধরার অলিখিত অনুমতি পেতে জেলেরা বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে বনে প্রবেশ করেন। পরে অভয়ারণ্যসহ সুন্দরবনের অভ্যন্তরের নদী ও খালে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করেন।

সুন্দরবনের নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা তানজিলুর রহমান বলেন, ‘জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র নবায়নে আমরা ১ হাজার টাকা করেই নিয়েছি, এটা সত্য। দীর্ঘদিন ধরে এ স্টেশনে বিএলসি নবায়নে এমন নিয়ম চলে আসছে।’

কাগাদোবেকী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাঈদ অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়ে বলেন, ‘জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র নবায়নে রাজস্বের বেশি টাকা নেয়া হয়, এটা ঠিক। তবে তাদের কাছ থেকে জোর করে নেয়া হয় না। টাকা দিতে জেলেরা আপত্তি করেন না। তাছাড়া আমরা জেলেদের সুযোগ-সুবিধা দেখি। জেলেরা নিষিদ্ধ জাল, বরফ, দা-কুড়াল নিয়ে বনে প্রবেশ করে, আমরা দেখেও সেটা দেখি না।’

কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, ‘জেলেদের বিএলসি নবায়নে অন্য স্টেশনগুলোর তুলনায় আমার এখানে টাকার পরিমাণ কম। আমি মাত্র ৬০০ টাকা নিচ্ছি। আমাদের বোটে টহলের জন্য যে পরিমাণ জ্বালানি তেল দেয়া হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ হয়। আমরা সেটা বিএলসি নবায়নে আদায় করা অতিরিক্ত টাকা থেকে খরচ করি। জেলেরা স্বেচ্ছায় এ টাকা দেন।’

এ প্রসঙ্গে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘বন কর্মকর্তাদের কারো বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুন্দরবনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধ দমনে সচেষ্ট রয়েছেন বনরক্ষীরা। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বনরক্ষীদের কারো বিরুদ্ধে অবহেলা অথবা অপরাধীর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ প্রমাণিত হলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন