প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের বাইরে গিয়ে নারীদের ভাষা

ফারিহা আজমিন

ছবি : সংগৃহীত

শিল্পচর্চার রয়েছে নানা দিক। এক একজন শিল্পী তার শিল্পচর্চার মধ্য দিয়েই সমাজের ভিন্ন বিষয়গুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এমনই একজন গুণী বাংলাদেশী শিল্পী দিলারা বেগম জলি। যার কাজের মধ্য দিয়ে সমাজে নারীদের যে অসম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়, নানা নিপীড়নের শিকার হতে হয় সেসবই তার চিত্রকর্মে নানাভাবে হাজির হয়েছে। নারীর জীবন নিয়ে এসব নিরীক্ষার প্রেরণা তিনি পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার সময় থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হয়েছেন ১৯৭৬ সালে। সেখানেই আউটডোর ক্লাসে একটি ইটের ভাটায় ছবি আঁকতে গিয়ে তিনি পরিচিত হয়েছেন সমাজের অন্যপাশের মানুষগুলোর ভাবনার সঙ্গে। কারণ সেখানে কিছু শ্রমিক এসে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল ইটের ভাটায় নারী উঠলে ইট নষ্ট হয়ে যায়। শিল্পী বিশ্বাস করেন সমাজের এ নিচু মানসিকতা আজকের শিল্পীকে জন্ম দিয়েছে। এছাড়া শিল্পী দিলারা বেগম জলির কাজের কেন্দ্রীয় চরিত্রে বরাবরই নারী। সেই সঙ্গে চিত্রকর্মের বাইরে সুচের কাজ, আলোকচিত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে অভিনব সব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন তিনি। দীর্ঘ শিল্প জীবনের পথচলায় ২০০৮ সালে এসে তিনি লক্ষ করেন তার ছবি আঁকার ধরন বা ছবির ভাষায় সব একই আঁকছেন। তখনই কিছুটা প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের বাইরে গিয়ে নারীদের ভাষা আঁকতে শুরু করেন তিনি। এঁকেছেন নকশিকাঁথা সেলাইয়ের মতো চিত্রকর্ম। সে চিত্রকর্মগুলোর বিষয়বস্তু ও শিরোনামে ছিল ‘তাহাদের কথা’ অর্থাৎ নারীদের কথা। এছাড়া সমাজের আরো একটি অবহেলিত শ্রেণী,  দেহোপজীবিনীদের নিয়েও তার কাজ রয়েছে।

চিত্রকর্মে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক যে ফর্মটা তৈরি আছে, সেই পশ্চিমা স্টাইলের মডেল থেকে বেশকিছুটা ভিন্ন ফর্মেই ছবি আঁকতে পছন্দ করেন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী দিলারা বেগম জলি। প্রাতিষ্ঠানিক ফর্ম ছেড়ে ফোক আর্টের দিকেই মনোনিবেশ করেন তিনি। সেই সঙ্গে সে ধারার রঙের দিকেও ঝুঁকেছেন শিল্পী। এছাড়া তার বেশির ভাগ কাজে ভায়োলেট কালার বেশি দেখা যায়। শিল্পী দিলারা বেগম জলির কাজে শিবের রঙ, কারণ নারী যে সমাজের সব ময়লা-আবর্জনা নিজের শরীরে শিবের মতো গ্রহণ করে সেটিকেই উপস্থাপন করতেই শিবের রঙ ব্যবহার করেন তিনি। নারীকে বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। যদিওবা অনেকে বলেন, ‘‌এ যুগে নারীকে আলাদা করে চিত্রকর্মে উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই।’ তবে শিল্পচর্চার জায়গা থেকে তিনি মনে করেন যতদিন সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য বিদ্যমান থাকবে, ততদিন কারো না কারো ক্যানভাসে নারী উঠে আসবেই। তার এ নারীবাদী ভাবনা-দর্শন শিল্পী জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিনি একজন নারীবাদী নন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন সমাজ থেকেই দর্শন তৈরি হয়। তাই তিনি নারীদের নিয়ে কাজ করেন। কারণ সমাজ পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা দিয়ে নারীকে দাবিয়ে রাখতে চায়, তখন শিল্পের জায়গা থেকে নারীদের কথা আরো জোরালো কণ্ঠে তিনি বলতে চান। নারীদের বেদনার কথা বলতে চান।

পাশাপাশি সুই-সুতায় এঁকেছেন মুক্তিযুদ্ধের নানা গল্পচিত্র। তুলে ধরেছেন একাত্তরের মিলিটারিদের নির্যাতনের গল্প।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন