ডায়াপ্যান্টের চাহিদায় পরিবর্তন

বয়স্ক জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধিতে জাপানে বদলে যাচ্ছে শিশুপণ্যের বাজার

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : বণিক বার্তা

বিশ্বে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। জাতিসংঘের ভাষায়, বয়স্ক জনগোষ্ঠী বৃদ্ধির প্রবণতাঅবধারিত মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং পরিবার ক্রমে ছোট হয়ে যাওয়ার কারণেই মূলত বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক বাণিজ্যিক বাস্তবতায়। জাপানের সাম্প্রতিক প্রবণতা হিসেবে পরিবর্তনের একটি সূচক হলোডায়াপ্যান্ট শিল্পে উৎপাদনের ধরনে বদল। শিশুদের বদলে দেশটির কোম্পানিগুলো বড়দের ডায়াপ্যান্ট উৎপাদনকে নতুন লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে। খবর সিএনএন।

জাতিসংঘের গত বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৬০ কোটিতে দাঁড়াতে পারে। বয়স্ক মানুষের বৃদ্ধি এরই মধ্যে জাপানের মতো শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, অন্যদিকে মানুষের সন্তান নেয়ার প্রবণতা কমছে।

জাপান সরকার গত মাসের শুরুর দিকে জানায়, দেশটিতে জন্মহার টানা আট বছর ধরে কমছে। ২০২৩ সালে দেশটিতে লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ শিশুর জন্ম হয়, যা ১২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। দেশটিতে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের বয়স ৮০ বছর বা তার চেয়ে বেশি। বিশ্বে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর হার সবেচয়ে বেশি জাপানে। দেশটির ৩০ শতাংশ মানুষের বয়স ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি।

বেশি বেশি সন্তান নেয়ায় উৎসাহ দিতে গত বছরের জুনে কয়েকশ কোটি ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। জাপান জনসংখ্যার সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করছে। সংকট দেশটির পেনশন তহবিল স্বাস্থ্যসেবায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ দেশটিতে কর্মশক্তি সংকুচিত হয়ে আসছে এবং বয়স্ক জনসংখ্যার স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা চাহিদা বেড়ে গেছে।

বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব জাপানের পণ্যবাজারেও পড়ছে। দেশটিতে বয়স্ক মানুষের ডায়াপ্যান্টের চাহিদা বেড়ে গেছে, বিপরীতে কমেছে শিশুদের ডায়াপ্যান্টের চাহিদা।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনালের হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে বয়স্কদের ডায়াপ্যান্টের বৈশ্বিক বাজারের মূল্য ছিল হাজার ২৮০ কোটি ডলার। এটি ২০২৬ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াতে পারে হাজার ৫৫০ কোটি ডলারে। এর মধ্যে জাপানে ২০২৩ সালে বয়স্কদের ডায়াপ্যান্টের বাজার ছিল ১৭০ কোটি ডলারের। এটি ২০২৬ সালে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৯০ কোটি ডলারে, যা বিশ্ববাজারের প্রায় ১২ শতাংশ।

গত মার্চে জাপানের প্রতিষ্ঠান ওজি হোল্ডিংস ঘোষণা দেয়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তারা জাপানের বাজারে আর শিশুদের ডায়াপ্যান্ট সরবরাহ করবে না। এর পরিবর্তে তারা বয়স্কদের পণ্য উৎপাদনে মনোযোগ দিতে চায়। তবে অন্যান্য দেশে শিশুদের ডায়াপ্যান্ট রফতানি অব্যাহত থাকবে।

জি হোল্ডিংস জানায়, চীন, ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়ায় শিশুদের ডায়াপ্যান্ট রফতানি বেড়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি কমছে। ২০২৩ সালে শিশুদের তুলনায় বয়স্কদের ডায়াপ্যান্টের বিক্রি ছিল দশমিক শতাংশ বেশি।

বয়স্ক জনগোষ্ঠী বেড়ে যাওয়ার প্রভাব জাপানের অন্যান্য পণ্যেও পড়েছে। প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্যানাসনিক জানিয়েছে, বয়স্কদের জন্য উপযোগী করে পণ্য উৎপাদন করতে তারা ১৯৯০ সাল থেকেই গবেষণা চালিয়ে আসছে।   

আরেক জাপানি প্রতিষ্ঠান জোজিরুশি এরই মধ্যে বয়স্কদের জন্য নানা পণ্য বাজারে এনেছে। এর মধ্যে একটি চা পানের পাত্র আছে, যেটি ব্যবহার করলে আগে থেকে নির্ধারিত -মেইলে বার্তা চলে যায়, যেন স্বজনরা পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তির গতিবিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে পারেন।

জাপানের মতো পরিস্থিতি দক্ষিণ কোরিয়ারও। দেশটিতে ২০২৩ সালে জন্মহার ছিল দশমিক ৭২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল দশমিক ৭৮ শতাংশ। জন্মহার কমছে হংকং, চীন তাইওয়ানেও।

জাতিসংঘের হিসাবে, শীর্ষ ১০ বয়স্ক জনগোষ্ঠীর তালিকায় ২০৫০ সাল নাগাদ এশিয়ার দেশ থাকবে ছয়টি। জাতিসংঘ আভাস দিয়েছে, ২১০০ সালে গিয়ে আফ্রিকাই হবে একমাত্র অঞ্চল, যেখানে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৫ শতাংশের নিচে থাকবে। ইউরোপ, নর্দার্ন আমেরিকা লাতিন আমেরিকায় হার থাকবে ৩০ শতাংশের বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন