আইবিএফবি’র সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মজিদ

কর আইনের চোখ ট্যারা, তাকায় একদিকে দেখে আরেক দিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: বণিক বার্তা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেছেন, দেশের কর আইনের চোখ ট্যারা; তাকায় একদিকে, দেখে আরেক দিক। দেশে বর্তমানে কর আইনগুলোর ফলে প্রত্যক্ষ খরচ কমছে ঠিকই কিন্তু পরোক্ষ খরচ অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে। রাজস্ব আদায় প্রত্যক্ষ করমুখী হলে আয় বৈষম্য কমবে।

মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নিজেদের কার্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন আইবিএফবি-এর প্রেসিডেন্ট হুমায়ূন রশিদ, সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান খান, সহ-সভাপতি লুৎফুন্নিসা সৌদিয়া খান, রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, আইবিএফবির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।

কালোটাকা সাদা করা প্রসঙ্গে আইবিএফবি-এর উপদেষ্টা মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে অবৈধ সম্পদ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হতে পারে। তবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে সাধারণ মানুষ নতুন করে করদাতা হতে চাইবে না। বাজেটে কালো টাকা সরাসরি উল্লেখ করা না হলেও বলা হয়েছে অপ্রদর্শিত অর্থ। যুক্তি দেয়া হয়েছে অনেক কারণে ব্যবসায়ীদের অর্থ অপ্রদর্শিত হতে পারে। যেটি অর্থনীতিতে আসার সুযোগ দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেখানে তো নিয়মটা হওয়ার কথা সাধারণ কর দাতাদের মতো কর দিয়ে একটা অংশ জরিমানা হিসেবে দেয়ার বিধান। কিন্তু সেটা না করে সরাসরি বিনা প্রশ্নে মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থ দিয়ে বৈধ করার বিধান রাখা হয়েছে। ফলে যেসব ব্যবসায়ী সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবসা করেন, তারা বাজারে অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বেন। কারণ যার অবৈধ টাকা সে দেবে ১৫ শতাংশ আর যার বৈধ সে পর্যায় ক্রমে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত দিতে হবে। এটা ন্যায্যতা হতে পারে না। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা আগেও ছিল। তবে এবার বলা হয়েছে, টাকা সাদা করলে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। ফলে নানারকম প্রশ্ন উঠছে। কালোটাকা থাকলে প্রশ্ন উঠবেই, এটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, অর্থনীতিতে উত্তরণ না ঘটলে ২০২৬ সালে আমরা বিপদে পড়ে যাব। এ জন্য এখনই সংস্কার করে অর্থনীতির উন্নতি ঘটানো প্রয়োজন। আগে প্রতিবছর বাজেট বাড়ত ১২-১৩ শতাংশ, এবার যা কমে হয়েছে ৪-৫ শতাংশ। এবারের বাজেট পরোক্ষ করমুখী হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষ কর আদায়ের ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। প্রত্যক্ষ কর না বাড়লে বৈষম্য কমবে না।

আর দুর্নীতি ব্যবসা সহজীকরণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা উল্লেখ করে আইবিএফবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হুমায়ূন রশিদ বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য উত্থাপিত বাজেটে শিল্প-বিনিয়োগবান্ধব কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। হাইটেক পার্ক ও ইকোনোমিক জোনে যে এক শতাংশ কর নির্ধারণ করা হলো সেটি বিদেশি বিনিয়োগে বড় ধরণের বাঁধা তৈরি করবে। একটি কারণ হচ্ছে অল্প সময়ে নীতি পরিবর্তন আর অন্যটি হচ্ছে যারা বিনিয়োগ করেছেন তারা কর ছাড়ের আশায় করেছেন, এখন কর আরোপে একটা অসন্তোষ আর ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবে।

হুমায়ূন রশিদ বলেন, দেশের অর্থনীতি কী অবস্থায় আছে তা আমরা প্রতিনিয়ত বুঝতে পারছি। দেশের অর্থনীতিতে এখন ক্রান্তিকাল যাচ্ছে। ব্যবসা সহজীকরণে বাধা হয়ে আছে দুর্নীতি। বাজেটে সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু এমন কোনো নীতিমালা আমরা বাজেটে পাইনি। দেশে বহু কোম্পানি জেনারেটর উপৎপাদন করেন। এখন বাজেটে দেশে উৎপাদনকারী এবং আমদানিকারক দুপক্ষের কর হার সমান কর হার (১ শতাংশ) করা হয়েছে। ফলে দেশে উৎপাদিত কোম্পানিগুলো অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে এবং এ খাতে দেশীয় উদ্যোক্তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন। হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন