এশিয়ার বন্দরগুলোয় পণ্যজট দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা

শিপিং ব্যয় বাড়ার পূর্বাভাস

বণিক বার্তা ডেস্ক

চাহিদা বৃদ্ধি ও পণ্যবাহী জাহাজে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিভিন্ন দেশের বন্দরে পণ্যজট তৈরি হচ্ছে ছবি: দ্য স্ট্রেইটস টাইমস

লোহিত সাগর ও সুয়েজ খালের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, বিভিন্ন দেশে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ও পণ্যবাহী জাহাজে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিভিন্ন দেশের বন্দরে পণ্যজট তৈরি হচ্ছে। এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রবন্দরগুলোয় এ ধরনের পণ্যজট আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে কনটেইনার ভাড়া বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে ড্যানিশ শিপিং কোম্পানি এপি মোলার-মায়েরস্ক। খবর দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ পণ্যবাহী জাহাজের ওপর নির্ভরশীল। গত বছরে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট লোহিত সাগরে কয়েকটি বাণিজ্যিক জাহাজে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথিদের ড্রোন ও মিসাইল হামলার ঘটনা ঘটে। এর পরই হামলা থেকে বাঁচতে রুটটি এড়িয়ে আফ্রিকা ঘুরে চলাচল শুরু করে মায়েরস্ক, হ্যাপাগ-লিয়ডসহ অন্য শিপিং কোম্পানিগুলো। ফলে পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ায় বিশ্ব সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

প্রাইসিং প্লাটফর্ম জেনেটার মতে, গত মাসের শেষ দিকে চীনের জাহাজে ১২ মিটার একটি কনটেইনার উত্তর ইউরোপ পাঠানোর স্পট রেট ছিল ৪ হাজার ৬১৫ ডলার। অথচ মাসের শুরুর দিকেও সাড়ে তিন গুণ খরচ কম হতো। অবশ্য ২০২২ সালে এটি সর্বকালের সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৪০৭ ডলারে পৌঁছেছিল। যদিও এ রেটে অগ্রাধিকারের চালানের জন্য ‘ডায়মন্ড টায়ারের’ ১০ হাজার ডলার অন্তর্ভুক্ত নয়।

অন্যদিকে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় বন্দরের পাঠানোর বর্তমানে স্পট রেট ৬ হাজার ৬১ ডলার, যা গত মাসের শুরুতেও ছিল ২ হাজার ৭৭২ ডলার। তবে ২০২২-এর জানুয়ারিতে এটি রেকর্ড ১১ হাজার ৯০০ ডলারে পৌঁছেছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রিসমাস, থ্যাংকসগিভিংসহ বেশকিছু উৎসবকে সামনে নিয়ে ওয়ালমার্ট ও টার্গেটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য মজুদ করছে। অন্যদিকে উৎপাদক ও আমদানিকারকরাও শুল্ক বাড়ার আশঙ্কায় দ্রুত আমদানি-রফতানি করতে চাচ্ছেন। ফলে স্পট রেট আরো বেড়ে যেতে পারে।

শিপিং খাতের তথ্য প্রকাশকারী সংস্থা লাইনারলিটিকার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কনটেইনারের বাজারে উচ্চ চাহিদা তৈরি করছে। জাহাজগুলোয় স্থান সংকুলান করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত লজিস্টিকসেরও অভাব তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে চীনসহ অন্য এশীয় দেশগুলোয় পণ্যজট আরো বেড়েছে।

সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দর সিঙ্গাপুরেও পণ্য পরিবহন বিলম্বিত হচ্ছে। পণ্যবাহী কিছু জাহাজ বন্দরে না ভিড়েই চলে গেছে।

এভারস্ট্রিম অ্যানালিটিকসের চিফ ইন্ডাস্ট্রি অফিসার কোরে কোশ বলেন, ‘‌শ্রীলংকা ও সংযুক্ত আবর আমিরাতে খালি কনটেইনার জমে যেতে শুরু করেছে। অন্যদিকে চীন ও সিঙ্গাপুরে কনটেইনার সংকট শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে চরম বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।’

সাম্প্রতিক পণ্যজট ও কনটেইনারের ভাড়া বাড়লে মায়েরস্কেরই লাভ হবে। সম্প্রতি কোম্পানিটি বলেছে, সম্ভাব্য পণ্যজট ও কনটেইনার ভাড়া বেড়ে গেলে ২০২৪ সালের দ্বিতীয় অর্ধে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে। এদিকে কনটেইনারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটি এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো পুরো অর্থবছরের আয়ের পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। এর আগে মায়েরস্ক সুদ, কর, অবমূল্যায়ন ও পরিমার্জন বাদ দিয়ে ৪০০-৬০০ কোটি ডলার পরিচালন মুনাফার পূর্বাভাস দিয়েছিল। তবে সর্বশেষ পূর্বাভাসে তা ৭০০-৯০০ কোটি ডলার উন্নীত হয়।

বিশ্বজুড়ে সম্প্রসারিত নেটওয়ার্কের কারণে মায়েরস্ককে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ‘ব্যারোমিটার’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রতি ভূমধ্যসাগর ও এশিয়ার বন্দরগুলোয় ভয়াবহ পণ্যজটে পড়ে কোম্পানিটি। ফলে পণ্য পরিবহন ব্যাপকভাবে বিলম্বিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন