ঊর্ধ্বমুখী চাহিদায় ভারতীয় চালের রফতানি মূল্য বেড়েছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

থাইল্যান্ডে চালের দাম তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌছেছে ছবি: রয়টার্স

ভারত চলতি সপ্তাহে চালের রফতানি মূল্য বাড়িয়েছে। দেশটি তুলনামূলক কম মূল্যে চাল সরবরাহ করায় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদা বেড়েছে। আর সম্প্রতি ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণেই চালের রফতানি মূল্য বাড়িয়েছে ভারত। খবর বিজনেস রেকর্ডার। 

দেশটিতে গত সপ্তাহে ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চালের টনপ্রতি মূল্য ছিল ৫৩১-৫৩৯ ডলার। কিন্তু চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে ৫৩৬-৫৪৪ ডলার হয়েছে। তুলনামূলক কম মূল্যে চাল রফতানি করায় আফ্রিকায় ভারতীয় চালের চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের মুম্বাইভিত্তিক এক ব্যবসায়ী। 

অন্যদিকে এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ডে চালের দাম তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌছেছে। অভ্যন্তরীণ বাজার ও ইন্দোনেশিয়ার বাজারগুলোয় এ দেশের চালের ব্যাপক চাহিদার কারণে থাইল্যান্ডে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। 

দেশটিতে চলতি সপ্তাহে ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চালের টনপ্রতি মূল্য ছিল ৬৩০-৬৩৫ ডলার। যদিও এ সময় দেশটিতে চালের দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে টনপ্রতি এর মূল্য ছিল ৬৩২-৬৪০ ডলার। দেশের অভ্যন্তরে ও ইন্দোনেশিয়ায় থাই চালের ব্যাপক চাহিদার কারণে এ চালের মূল্য তুলনামূলক বেশি বলে জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের রাজধানী ভিত্তিক এক ব্যবসায়ী। 

তবে অতিরিক্ত মূল্যের কারণে ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি শুরু করলে এর মূল্য কমে যেতে পারে। এছাড়া বাজারে নতুন চালের জোগান আসা পর্যন্ত এ পণ্যের মূল্য কিছুটা অস্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্য এক ব্যবসায়ী। 

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামের ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চালের টনপ্রতি মূল্য ছিল ৫৮৫-৫৯০ ডলার। আগের সপ্তাহেও দেশটিতে চালের দাম একই ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইন্দোনেশিয়ায় ভিয়েতনামের চালের চাহিদাও দিনদিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির হো চি মিন শহরের এক ব্যবসায়ী। 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও যথেষ্ট মজুদ থাকা সত্ত্বেও চালের দাম বেড়েছে। দেশে চাল উৎপাদন গত ৫০ বছরে চার গুণেরও বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ। 

তবে এশিয়ায় ২০২৪ সালে চাল উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। এল নিনোর প্রভাবে আবহাওয়ায় শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করবে, যা মাটির আর্দ্রতা কমিয়ে দেবে। ফলে এশিয়ার শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশগুলোয় ফলন ব্যাহত হবে। এতে খাদ্যপণ্যটির মজুদও কমে আসবে। সব মিলিয়ে বাজারে সরবরাহস্বল্পতার ফলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে।

বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিশ্বের বৃহত্তম চাল রফতানিকারক ভারত ও দ্বিতীয় শীর্ষ সরবরাহকারী থাইল্যান্ড চলতি বছর চাল উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে। ইন্দোনেশিয়ায় খরার কারণে ঠিকমতো ধান চাষ করতে পারেননি কৃষকরা। ফলে শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক দেশটি থেকে আমদানি চাহিদা আগের চেয়ে আরো বেড়েছে। 

তথ্য বলছে, গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়ে ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। শস্যটির দামে এমন উল্লম্ফনের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। এশিয়া ও আফ্রিকায় অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের অর্থনীতিতে বাড়ছে ঝুঁকি। 

বিশ্ববাজারে চালের সরবরাহ সংকটের পেছনে অনেকগুলো বিষয়কে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। এল নিনোর কারণে আবহাওয়ার অপ্রত্যাশিত আচরণ খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। কোথাও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত আবার কোথাও খরা ব্যাহত করছে শস্যটির আবাদ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া। 

এর আগে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে চাল রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল ভারত। ওই সময় বাসমতী ছাড়া সব ধরনের সাদা চাল রফতানিতে দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। স্থানীয় সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতেই এ রফতানি নীতি গ্রহণ করেছিল নয়াদিল্লি। ফলে সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে শস্যটির সরবরাহ সংকট দেখা দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন