ভেনিস বিয়েনালের ৬০তম আসরের খোঁজখবর

সাফকাত সায়েম

রোমানিয়ান প্যাভিলিয়ন ছবি: ফোর্বস/ইউগো কারমেনি

ভেনিস বিয়েনালকে গণ্য করা হয় শিল্পজগতের অলিম্পিক হিসেবে। ইতালির ভেনিসে কয়েক মাস ধরে চলে সমকালীন শিল্পের জমজমাট সমাবেশ। থাকে বিভিন্ন দেশের নিজস্ব প্রদর্শনী। কেবল চিত্রকলা নয়, যেন স্থাপত্য, চলচ্চিত্র ও নাটকের উৎসব। যথারীতি সাড়ম্বরেই শুরু হলো বিয়েনালের ৬০তম আসর। ২০ এপ্রিল শুরু হওয়া শিল্পোৎসব চলবে আগামী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। বিয়েনালের প্রথম আসর হয়েছিল ১৮৯৫ সালে। তারপর দুই বছর পরপর আসর হচ্ছে। মহামারী থাকার পরও পূর্ববর্তী আসরে আট লাখ দর্শক গিয়েছিল দেশ-বিদেশ থেকে। প্রধান প্রদর্শনীতে অংশ নেন হাজারো চিত্রশিল্পী। থাকেন মাত্র একজন কিউরেটর। চলতি বছর কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করছেন আদ্রিয়ানো পেদরোসা। তিনি সাও পাওলো মিউজিয়াম অব আর্টের পরিচালক। 

বিয়েনালে এবারের প্রদর্শনীতে প্রায় ৯০টি দেশ অংশ নিয়েছে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব সংগ্রহশালা পরিচিত হয় প্যাভিলিয়ন নামে। সেদিক থেকে প্যাভিলিয়নে থাকা শিল্পকর্ম তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। ভেনিসের বিভিন্ন মিউজিয়াম প্রদর্শনীতে নতুনভাবে সেজেছে। বসেছে শিল্পীদের সমাবেশ। কেউ কেউ কেবল শিল্পের খাতিরে না, উপার্জনের পন্থা হিসেবেও পাড়ি জমিয়েছেন সেখানে। এবারের আসরে বিখ্যাত চিত্রকর জেফরি গিবসনের কর্ম শোভা পাচ্ছে মার্কিন প্যাভিলিয়নে। তবে অন্যান্য দেশের প্যাভিলিয়নকে সামনে রেখে তুলনা করলে মার্কিন প্যাভিলিয়নটিকে কিছুটা রঙহীন মনে হতে পারে। বিয়েনালে চমকপ্রদ আকর্ষণ হাজির করেছে নাইজেরিয়ার প্যাভিলিয়ন। তার প্রধান কারণ কোনো আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিয়েনালেতে প্রথমবার নাইজেরিয়া প্রতিনিধিত্ব করছে। প্যাভিলিয়নের কিউরেটর হিসেবে রয়েছেন আন্দ্রিয়া এমিলাইফ। দেশটির আটজন শিল্পী পেইন্টিং, ফটোগ্রাফি ও ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে তুলে এনেছেন শেকড়ের গল্প।

শিল্প ও সাহিত্যে ফরাসিদের বরাবরই আকাশ সমান খ্যাতি। চলতি বছরেও তা বিঘ্নিত হয়নি। জুলিয়ান ক্রিউজেটের মতো শিল্পীদের পরাবাস্তব নির্মাণে এসেছে আলাদা আমেজ। জুলিয়ান ফ্রান্সের তরুণ শিল্পীদের একজন, যার অধিকাংশ সৃষ্টিকর্মই পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ক্যারিবিয়ান অঞ্চলকে ঘিরে। উঠে এসেছে অভিবাসনের গল্পও, যার মধ্য দিয়ে কেবল তার পূর্বপুরুষের না: পৃথিবীর সব অভিবাসীর গল্পও যেন বিম্বিত হয়েছে। ফ্রান্স আর নাইজেরিয়ার পাশাপাশি প্রদর্শনীতে জাপানের প্যাভিলিয়নও পিছিয়ে নেই। কিউরেটর সুক কিউং লির নেতৃত্বে সেখানে শোভা পাচ্ছে ইয়ুকো মোহরির দুটি ইনস্টলেশন। প্রথমটি জাপানের সাবওয়ে থেকে অনুপ্রাণিত আর দ্বিতীয়টিতে আছে বিভিন্ন ফল। 

প্রতিটি প্যাভিলিয়ন নিজেদের সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নানাভাবে সজ্জিত হয়েছে। তবে গতবারের মতো এবারো রয়েছে কিছুটা সমালোচনা। আগের আসরে ২০২২ সালের বিয়েনালে আলোচনায় ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। সে সময় রাশিয়ান প্যাভিলিয়ন ছিল বন্ধ এবং ইউক্রেনের প্যাভিলিয়ন ছিল ধূলিময়। এ বছর গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদেও চলছে নানা ধরনের প্রতিবাদ ও সমালোচনা। 

বিয়েনালে প্রথম প্রদর্শনীর উন্মোচন করেছিলেন তখনকার ইতালির রাজদম্পতি। শুরুতেই দর্শকদের আকর্ষণ করে ভেনিস বিয়েনালে। উপভোগ করে দুই লাখেরও বেশি মানুষ। তার পর থেকে বিশ্বযুদ্ধের কারণে কিছুটা অনিয়মিত হলেও দুই বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়ে চলছে আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনের তাৎপর্যপূর্ণ এ প্রদর্শনী। ৬০তম আয়োজনের স্লোগান ‘ফরেইনার্স এভরিহোয়্যার’। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন