বন্যায়
টাঙ্গাইলের ঝিনাই নদীর সেতুর কিছু অংশ ভেঙে যায় ২০০৭ সালে। এর পর থেকে
সেতু দিয়ে হেঁটে চলাচল করা গেলেও
বন্ধ হয়ে যায় ভারী যানবাহন চলাচল। ২০২০ সালে সেখানে নতুন করে সেতু নির্মাণ শুরু হয়। এজন্য আগের সেতুটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। তবে দুই বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও চার বছরে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি পিলার। কাজে ধীরগতির কারণে মাঝপথে বাতিল করা হয় কার্যাদেশ। পরিবর্তন
করা হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত এপ্রিলে নতুন
করে আহ্বান করা হয়েছে দরপত্র।
নদীপাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, চারটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এখন নৌকায় রশি টেনে নদী পার হচ্ছে। বর্ষায় এ ভোগান্তি আরো তীব্র আকার ধারণ করে। প্রায় চার বছর পার হলেও সেতু নির্মাণ শেষ হয়নি।
তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের কার্যাদেশ বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে সেতুর কাজ শুরু হবে।
স্থানীয়
সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল উত্তর পাড়া গ্রামে ঝিনাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি ছিল মির্জাপুর, দেলদুয়ার, বাসাইল ও কালিহাতী উপজেলার
বিভিন্ন গ্রামের মানুষ যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। তবে ২০০৭ সালের বন্যায় সেতুটির বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝিনাই নদীটি বয়ে গেছে মির্জাপুর ও বাসাইল ইউনিয়নের
ওপর দিয়ে। নদীর পশ্চিম পাশে রয়েছে কাশিল ইউনিয়নের নয়টি গ্রাম এবং পূর্ব পাশে রয়েছে আটটি গ্রাম। এসব গ্রামের মানুষ রশি টেনে নৌকায় নদী পার হচ্ছে। সেতু না থাকায় চরম
দুর্ভোগ পোহাতে হয় পশ্চিম পাড়ের
নয়টি গ্রামের মানুষকে। বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাতে।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, সেতু না থাকায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। তাছাড়া নদীপাড়ে এসে নৌকা ধরতে না পারলে প্রায় ২০-২৫ মিনিট বসে থাকতে হয়। সময়মতো পৌঁছানো যায় না। নদী পার হতে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও প্রায় সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে চলে গেছে। এলজিইডির লোকজন এখানে আসে আর বলে, কাজ শুরু হবে। কিন্তু আজও শুরু হলো না।
কাশিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রমজান মিয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘২০২১ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হলেও কয়েক মাস পরই বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদার বিল তুলে নিয়ে চলে গেছে বলে শুনেছি। সেতু নির্মাণের জন্য যেসব সামগ্রী প্রয়োজন, সেগুলোর দাম বেশি হওয়ায় ঠিকাদার কাজ বন্ধ রাখে বলে শুনেছি। এখন শুনছি পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।’
টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২৭০ মিটার সেতু নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ২৬ কোটি ৫৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩৯ টাকা। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ সেতু নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ পায় মেসার্স ময়নুদ্দিন লিমিটেড এবং এমএস দ্বীপ কনস্ট্রাকশন জেবি নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দ্রুত কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নদীপাড়ে মাত্র তিনটি পিলার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সেতুর অ্যাপ্রোচের সীমনা নির্ধারণ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আগের কার্যাদেশ বাতিল করে গত ১৮ এপ্রিল সিআইভি আরআরপি প্রকল্পে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার এ কাজটি পেয়েছে দুর্গা এন্টারপ্রাইজ।
এ ব্যাপারে দুর্গা এন্টারপ্রাইজের প্রকৌশলী নাহিদুল ইসলাম লিটন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘১৮ এপ্রিল সিআইভি আরআরপি প্রকল্পের আওতায় পুনরায় ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে আমাদের হাতে এখনো কার্যাদেশ আসেনি। দু-একদিনের মধ্যেই পেয়ে যাব বলে আশা করছি। ১৫ দিনের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করব।’
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘২০২০ সালে সেতু নির্মাণ শুরু হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করে। এজন্য কার্যাদেশ বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।’