অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ক্যাম্পাসে দুর্লভ প্রজাতির গাছ রোপণই তার নেশা

আবদুল্লাহ আল মামুন

ছবি: লেখকের সৌজন্যে

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বন্ধুদের ফুল গাছের নাম জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দিতে পারত না। তখন খারাপ লাগত। ফুল এত সুন্দর অথচ আমরা এর নাম জানি না! তখন থেকে ফুলের নাম জানার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরুর পর ফুলের নাম জানা ও গাছ সংগ্রহ নেশার মতো হয়ে যায়।

এ মানুষের নাম রাজেন্দ্র ভৌমিক, তিনি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ক্যাম্পাসে গাছ লাগানো ও পরিচর্যার জন্য সবার কাছে তিনি বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। ক্যাম্পাসে কেউ গাছ রোপণ করতে চাইলে কিংবা ফুলের নাম জানতে চাইলে ছুটে আসেন রাজেন্দ্র ভৌমিকের কাছে। কারণ গাছ নিয়ে তিনি সবচেয়ে ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন।

লতাকাঞ্চন, হাপরমালি, বিচিত্রা, সুলতানচাঁপা, হলদে শিমুল, কমলা শিমুল, রক্তরাগ, জ্যাকারান্ডা, কনকচাঁপা, কনকচূড়া, পরশপিপুল, রুদ্রপলাশ, মুচকুন্দচাঁপা, স্বর্ণচাঁপা, কুরচি, সাদা রক্তকাঞ্চন, কইনার, কুসুম, তমাল, হলদে ট্যাবেবুইয়া, গোলাপি ট্যাবেবুইয়া, করঞ্জ, মাধবীলতা, মণিমালা, লাল সোনাইল, ক্যাসিয়া ব্যাকেরানিয়া, স্বর্গপদ্ম, পালাম, ম্যাগনোলিয়া, মহুয়া, সমুদ্রজবা, বেহুলা ফুল, পলকজুঁই, সাদা, হলদে ও গেরুয়া কল্কে ফুল, নীলমণিলতা, অশোক, নাগেশ্বর, দইগোটার মতো পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩০-৩৫টি দুর্লভ প্রজাতির গাছ আছে। এ গাছগুলো তিনি সহকর্মীদের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া দেশের সর্বত্র পাওয়া যায় এমন ২৫-৩০ প্রজাতির গাছ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোপণ করেছেন।

রাজেন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলো গাছ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আমি চেষ্টা করছি সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে রোপণ করতে। মানুষ একটা সময় এ হারিয়ে যাওয়া গাছগুলো সংগ্রহ করতে আমাদের ক্যাম্পাসে ছুটে আসবে।’

ফুলের গাছ সংগ্রহ করা এবং এগুলো ক্যাম্পাসে লাগানো রাজেন্দ্র ভৌমিকের নেশা। গাছ সংগ্রহ করতে রাজেন্দ্র ভৌমিকের গল্প অনেক। গাছের খোঁজে তিনি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, সিলেটের পাহাড়গুলোয়ও ঘুরেছেন। ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য গিয়ে সেখান থেকে দুর্লভ প্রজাতির পরশপিপুল গাছের বীজ সংগ্রহ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কমলা ও হলুদ রঙের শিমুল ফুলের গাছ খুঁজে বেড়িয়েছেন। খোঁজ পেয়েছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দির প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক কলেজ শিক্ষকের সংগ্রহে এ গাছ আছে। ওই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি কমলা ও হলুদ রঙের পলাশ গাছ ক্যাম্পাসে রোপণ করেছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজেন্দ্র ভৌমিকের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। সে সময় লাগানো গাছগুলো এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌন্দর্য ছড়াতে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরের পাশে থাকা পলাশ গাছটি মার্চে সৌন্দর্য ছড়িয়েছে, শহীদ মিনারের দুপাশে চন্দ্রপ্রভা আর কুরচি ফুলের সঙ্গে ছবি তোলা শিক্ষার্থীদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের দিকে যাওয়ার পথে জারুলের সারি যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য, কৃষ্ণচূড়া তার আগুন ঝরানোর সৌন্দর্য বিলি করছে সবার কাছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন