নেতানিয়াহু সরকারে ভাঙনের সুর

বণিত বার্তা ডেস্ক

গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে শনিবার হামলা চালায় ইসরায়েল ছবি: এপি

টানা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। দীর্ঘ এ হামলায় ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দেশটির বাহিনী। এর মধ্যেই উঠছে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন। যুদ্ধ শেষ হলে গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরির জন্যও ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারের মধ্যে বাড়ছে চাপ। এমন অবস্থায় নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভায় দেখা দিয়েছে ভাঙনের সুর।

গাজায় যুদ্ধপরবর্তী কোনো পরিকল্পনা না করা হলে দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির ওয়ার কেবিনেট মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ। গ্যান্টজের এ হুঁশিয়ারি ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটলের চিত্র তুলে ধরেছে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গাজায় ছয়টি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৮ জুনের মধ্যে একটি পরিকল্পনা করার বিষয়ে নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ দিয়েছেন গ্যান্টজ। এ ছয় দফার মধ্যে রয়েছে এলাকাটিতে হামাস শাসনের অবসান এবং বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে গ্যান্টজ বলেন, ‘‌আপনি যদি রাষ্ট্রকে ব্যক্তিগত বিষয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন, তাহলে আমাদের আপনার পাশে পাবেন। কিন্তু যদি ধর্মান্ধের পথ বেছে নেন এবং পুরো জাতিকে ডোবাতে চান, তাহলে আমরা সরকার ছাড়তে বাধ্য হব।’

তবে গ্যান্টজের মন্তব্যকে অবান্তর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ‘‌গাজায় সামরিক ও বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ইসরায়েলের পরিকল্পনা নেই, তা যেন নেতানিয়াহু জনসম্মুখে স্বীকার করে নেন।’ তিনি কয়েক মাস ধরেই বিষয়টি বারবার তুলছেন, কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন না।

গ্যালান্ট ও গ্যান্টজ উভয়েরই দাবি, গাজায় সামরিক শাসন অব্যাহত রাখা হলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে। আবার নেতানিয়াহুর দলের অনেকের ধারণা, হামাসকে পরাজিত করতে গাজায় ইসরায়েলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

শনিবার টেলিভিশনের একটি ভাষণে গ্যান্টজ নেতানিয়াহুর উদ্দেশে বলেন, ‘‌ইসরায়েলের জনগণ আপনাকে দেখছে।’

উল্লেখ্য, গ্যান্টজ যে ছয় দফা দাবি তুলেছেন, তার মধ্যে রয়েছে গাজায় হামাসের হাতে বন্দি সব ইসরায়েলি এবং বিদেশী জিম্মিদের মুক্তি এবং ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা।

এদিকে শনিবার গাজা উপত্যকার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া পূর্ব গাজার আল-দারাজ এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। একই অঞ্চলের একটি স্কুলে বোমা হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, গাজাজুড়ে হামলার মাত্রা আরো বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। শনিবার তারা কমপক্ষে ৬৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে একটি আবাসিক ভবনে হামলায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেক।

এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি আশ্রয় কেন্দ্রের গেটে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার ঘটনায় ১২ জন নিহত ও আরো ২৫ জন আহত হয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন