বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে চাপে ফেলছে উচ্চ সুদহার, ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ: জাতিসংঘ

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রবৃদ্ধি সংশোধন অনেকটাই মার্কিন অর্থনীতির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সকে প্রতিফলিত করে ছবি: রয়টার্স

উচ্চ সুদহার, ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে চাপের মুখে রয়েছে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি। চলতি বছরের বাকি মাসগুলোয় এ চাপ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহৎ অর্থনীতি ছাড়া অন্যান্য দেশের পক্ষে এ চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছে বৈশ্বিক রাষ্ট্রজোটটি। সংস্থাটির এক সংশোধিত পূর্বাভাসে উঠে এসেছে, চলতি বছর বৃহৎ অর্থনীতিগুলো প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে সক্ষম হবে। যদিও প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী রাখতে বেশ বেগ পোহাতে হবে অন্যান্য দেশকে।  খবর বার্নামা।

জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সিচুয়েশন অ্যান্ড প্রসপেক্টাস প্রতিবেদনে’ পূর্বাভাস সংশোধন করে ২০২৪ সালের জন্য বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেয়া পূর্বাভাস ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। সে হিসেবে দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে এ প্রাক্কলন। শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোকেই প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে বছরজুড়ে একাধিক চ্যালেঞ্জ থাকবে। বিশেষ করে চলমান উচ্চ সুদহার, মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিগুলো অারো প্রভাবিত হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা উন্নত দেশের তুলনায় এসব দেশে বেশি প্রভাব ফেলে খুবই দ্রুত। এর সরাসরি প্রভাবে পড়ে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি এসব দেশে বেশি প্রভাব ফেলে।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর শক্তিশালী অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স জাতিসংঘের পূর্বাভাস সংশোধনের পেছনে প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে। কেননা প্রতিবেদন অনুসারে, একই সময়ে বিশ্বের কিছু অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি আরো বেশি চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

চলতি বছরের পাশাপাশি ২০২৫ সালের জন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা শূন্য দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়েছে জাতিসংঘ। আগের দেয়া ২ দশমিক ৭ শতাংশের পূর্বাভাস সংশোধন করে ২ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।

গত জানুয়ারি থেকে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতি বেড়েছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বড় অর্থনীতির দেশগুলো এরই মধ্যে মন্থর পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। বেকারত্বের হার না বাড়িয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হয়েছে। এ ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন সত্ত্বেও সংশোধিত প্রাক্কলনকে ‘সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী’ হওয়ার মতো বলে উল্লেখ করেছে বৈশ্বিক সংস্থাটি।

সতর্কতা হিসেবে একগুচ্ছ চ্যালেঞ্জ সামনে রেখেছে জাতিসংঘ। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে জারি থাকা উচ্চ সুদহার, ঋণসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ, অব্যাহত ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত ঝুঁকি। তবে এ সমস্যাগুলো হঠাৎ দেখা দিয়েছে এমন নয়। বরং কয়েক দশক ধরে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সামনে হুমকি হিসেবে রয়েছে এসব সংকট। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এগুলো আরো প্রকট হয়ে উঠেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন অনেকটাই মার্কিন অর্থনীতির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সকে প্রতিফলিত করে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। জানুয়ারিতে পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, দেশটির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া বেশ কয়েকটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। এসব দেশের মধ্যে ভারতে ৬ দশমিক ৯ ও ব্রাজিলে ২ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেও রাশিয়ান ফেডারেশন ২ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, জানুয়ারিতে পূর্বাভাস ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির। ২০২৪ সালে চীন উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুসারে, দেশটিতে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে, যা জানুয়ারিতে দেয়া পূর্বাভাসের চেয়ে দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।

উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য পূর্বাভাস ১ দশমিক ৩ থেকে সংশোধন করে ১ দশমিক ৪ শতাংশ করা হয়েছে। তবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জন্য ১ দশমিক ২ শতাংশ কমিয়ে সংশোধিত পূর্বাভাসে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সংশোধন করে দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়েছে পূর্বাভাসে।

তবে সংশোধিত পূর্বাভাসে আফ্রিকা অঞ্চলের জন্য খারাপ খবর রয়েছে। চলতি সালের জন্য অঞ্চলটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস শূন্য দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া তুরস্কের প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে মন্থর হয়ে চলতি বছরে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, তুরস্কের মুদ্রা লিরার দ্রুত অবমূল্যায়ন মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি চাপ যোগ করেছে। ফলে দেশটির আর্থিক কর্তৃপক্ষ কঠোর নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক গড় হিসেবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির গতি মন্থর হলেও অঞ্চলভেদে ভিন্নতা রয়েছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশে এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া ঋণের উচ্চ সুদহার ও মুদ্রার বিনিময় হারে ব্যাপক চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কর্মসংস্থান তৈরিতে স্থবিরতা। উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরো কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন