মুস্তাফিজ আইপিএল থেকে ফিরলে লাভ-ক্ষতি কতটা?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চেন্নাইয়ের জার্সিতে আলো ছড়ান বাংলাদেশের পেস বোলার মুস্তাফিজুর রহমান ছবি: এপি

আগামী ৩ মে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে পাঁচ ম্যাচের হোম সিরিজ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। এ সিরিজ সামনে রেখে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল খেলা মুস্তাফিজুর রহমানের ডাক পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তরফ থেকে। যেহেতু বিসিবির এনওসি নিয়ে বিদেশের কোনো লিগে খেলতে হয়, তাই বিসিবির চাওয়াকে প্রাধান্য দিতে বাধ্য একজন ক্রিকেটার। মুস্তাফিজও। তবে তার ফেরা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কেউ ফেরার পক্ষে, কেউবা মনে করেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে তিনি আইপিএল খেললেই ভালো হতো।

এবারের আইপিএলে দারুণ পারফর্ম করে চলেছেন মুস্তাফিজ। উদ্বোধনী ম্যাচে চার উইকেট নিয়ে ঝলমলে যাত্রা করা এ পেস বোলার পরে আর অতটা ভালো না করলেও নিয়মিত উইকেট শিকার করে যাচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে তালিকার চতুর্থ স্থানে ছিলেন তিনি। তার ওপরে ছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের জশপ্রীত বুমরাহ (১৩ উইকেট), যুজবেন্দ্র চাহাল (১২ উইকেট) ও জেরাল্ড কোয়েৎজি (১২ উইকেট)।

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ আইপিএলে খেলতে মুখিয়ে থাকেন বিশ্বের শীর্ষ ক্রিকেটাররা। তবে সবার ভাগ্যে এখানে খেলার টিকিট মেলে না। এবার বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে দল পেয়েছেন মুস্তাফিজ, তা-ও যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংস দলে টেনেছে তাকে। এ আস্থার প্রতিদান তিনি প্রতি ম্যাচেই দিয়ে চলেছেন।

শুরুতে যে আলো ছড়িয়েছেন তাতেই চেন্নাই একাদশে অপরিহার্য খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন তিনি। এ কারণেই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিসিবি তাকে আইপিএল খেলার অনুমতি দিলেও চেন্নাই ১ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানোর আবেদন জানায়। তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিসিবি ১ মে পর্যন্ত মুস্তাফিজের ছুটি মঞ্জুর করেছে। ওইদিন চেন্নাইয়ের হয়ে ম্যাচ খেলেই দেশের বিমান ধরবেন তারকা ক্রিকেটারটি।

আইপিএলের সমাপ্তি টেনে মুস্তাফিজের দেশে ফেরা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। একদল বলছে, তার আইপিএলই খেলে যাওয়া উচিত ছিল। অন্য দল বলছে, তার বরং ফিরে এসে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেয়া উচিত। সাবেক টাইগার অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির পরিচালক আকরাম খান মনে করেন, মুস্তাফিজের আরো বেশি সময় আইপিএলে খেলা উচিত। অন্যদিকে ক্রিকেট অপারেশন্স পরিচালক জালাল ইউনুস মনে করেন, পেস বোলারটির বাংলাদেশের হয়ে খেলা উচিত।

আকরাম মনে করেন, জিম্বাবুয়েকে মোকাবেলা না করে বরং আইপিএলে বিশ্বের সেরা ২০ ব্যাটারের মোকাবেলা করাই মুস্তাফিজের জন্য শ্রেয়। তার কথায়, ‘মুস্তাফিজ এমন এক বোলার যাকে ঠিকমতো ব্যবহার করা গেলে দল উপকৃত হবে। ধোনির দল এখন সেটিই করছে। কলকাতার বিপক্ষে যেভাবে বল করেছে তা দেখে আমার মনে হয়, চেন্নাইয়ে খেলে সে ভীষণভাবে লাভবান হচ্ছে। তাই বলাই যায়, তার জন্য বাংলাদেশও লাভবান হবে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে না খেলে আইপিএলে খেললে সে অনেক কিছু শিখতে পারবে। কারণ ড্রেসিং রুমে সে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে সময় কাটায়। আর সেখানে বিভিন্ন ধরনের খেলোয়াড়দের বিপক্ষে খেলে।’

জালাল ইউনুস বিষয়টি দেখছেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আইপিএল থেকে তার শেখার কিছু সেই। তার শিক্ষণ পর্ব শেষ। বরং অন্য খেলোয়াড়রা মুস্তাফিজের কাছ থেকে শিখতে পারে। এটা বাংলাদেশকে উপকৃত করবে না।’

পুরো আইপিএলের জন্য সময় দিতে না পারলে ফ্র্যাঞ্চাইজি যেমন অসন্তুষ্ট হয়, তেমনি আগেভাগে দেশে ফেরায় আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মুস্তাফিজ। তিনি ১৪ ম্যাচ খেলবেন, এটা ধরেই তাকে ২ কোটি রুপি দেয়ার কথা চেন্নাইয়ের। তবে এখন অঙ্কটা হিসাব করা হবে ১ মে পর্যন্ত ৯ ম্যাচ ধরে। তার একটা ম্যাচের বেতন ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৫৭১ রুপি। তাই ৯ ম্যাচে তিনি পাবেন ১ কোটি ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৯ রুপি। 

এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় সরকার কর বাবদ কেটে রাখবে ২০ শতাংশ। সেক্ষেত্রে মুস্তাফিজের হাতে থাকছে ১ কোটি ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭১২ রুপি। আবার আইপিএলের গাইডলাইন অনুযায়ী, তার চুক্তির ২০ শতাংশ অর্থ পাবে সংশ্লিষ্ট বোর্ড, বিসিবি। সব মিলিয়ে ৯ ম্যাচ খেললে ২ কোটি রুপির মধ্যে মুস্তাফিজ পাচ্ছেন শেষমেশ ৮২ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৫ রুপি!

আর্থিকভাবে লাভ-ক্ষতি যা-ই হোক না কেন, এখানে মুস্তাফিজের কাছে বিকল্প নেই। দেশের প্রয়োজনে তাকে আইপিএল মিশন অসম্পন্ন রেখেই ফিরতে হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন