সংস্কারের পর ফিরছে বিটলস নিয়ে নির্মিত ‘লেট ইট বি’

ছবি: ভ্যারাইটি

বিটলসের নাম কে না জানে। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এ ব্যান্ড তাদের কর্মকাণ্ডে নতুন একটি ধারাই তৈরি করেছিল। কেবল গান বা সংগীত নয়, তারা হয়ে উঠেছিল ফ্যাশন আইকন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবনযাপনের একটা রেফারেন্স। বিটলস কোনো না কোনো সময় আভিজাত্যেরও প্রতীক হয়ে উঠেছিল। বিটলস বোঝে না এমন ব্যক্তিও এর গান শোনাকে তার দাম বাড়ানোর একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। এজন্য পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু তাদের ‘গীতগোবিন্দ’ গানে বলেছে ’বিটলস ছাড়া অন্য পোকা খুব বোরিং’। এত কথা সাতকাহন করে বলার কারণ, বিটলস নিয়ে আবেগ অনেকে দেখালেও তাদের নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র নিয়ে কারো তেমন মাথাব্যথা ছিল না। ‘লেট ইট গো’ নামের চলচ্চিত্রটি অবশেষে নতুন করে সংস্কারের পর প্রচারের দিকে যাচ্ছে।

বিটলসকে নিয়ে তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয় ১৯৭০ সালে। এরপর কেটে গেছে ৫৪ বছর। দশকের হিসাব করলে বলা যায়, ছয়টি দশক পার করেছে পৃথিবী। কিন্তু এর মধ্যে এ তথ্যচিত্র নিয়ে কোনো শোরগোল হয়নি। বিটলসের ভক্তরাও অনেকটা গা-ছাড়া ভাব দেখিয়েছেন। গণমাধ্যম ভ্যারাইটির ভাষায়, ‘তারা তথ্যচিত্রটির আত্মার সদগতি কামনা করেই খুশি ছিলেন।’ এরপর অবশ্য একটা দাবি ওঠে এবং বিটলসের অন্য নানা কাজের সঙ্গে এটিও সংস্কার করে সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে গুরুদায়িত্বটি নেন পিটার জ্যাকসন। তার টিমই বিটলসের এ তথ্যচিত্র সংস্কার করে। উল্লেখ্য, পিটার জ্যাকসন এর আগে ২০২১ সালে নির্মাণ করেছিলেন, ‘দ্য বিটলস: গেট ব্যাক’।

আশির দশক থেকে লেট ইট বি আর দর্শকের সামনে আসেনি। এর বেশকিছু কারণ ছিল। প্রথমত, তথ্যচিত্রটি নিয়ে প্রযোজক ও বিপণনকারীদের এক ধরনের অনীহা ছিল। মাইকেল লিন্ডসে-হগ নির্মিত তথ্যচিত্রটির প্রযোজক ছিল অ্যাপল ফিল্মস। তারা এক দশক পর সিনেমাটি ছড়িয়ে দেয়ার বদলে যেন এটিকে নষ্ট করার প্রতিই বেশি মনোযোগী ছিল। বিপণনের দায়িত্ব ছিল ইউনাইটেড আর্টিস্টের। তাদের মধ্যেই আগ্রহ দেখা যায়নি ৮০ মিনিটের এ তথ্যচিত্র নিয়ে কোনো কাজ করার। কিছু রিল এর মধ্যে অনেক আগ্রহীর হাত ধরে বিপণন হতো। কিন্তু দিনে দিনে তা-ও উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে শুরু করে। এতে ধুলোবালি-কাদা লেগে জেরবার অবস্থা হয়ে যেত। আশ্চর্যের বিষয়, এ চলচ্চিত্রের কোনো ডিভিডি কপি কখনো তৈরি হয়নি।

২০২১ সালে মুক্তি পায় জ্যাকসনের ‘দ্য বিটলস: গেট ব্যাক’। এর কাজ তিনি করছিলেন আরো আগে থেকে। তখনই বিটলসের পুরনো এ তথ্যচিত্রের প্রতি আগ্রহ অনুভব করেন জ্যাকসন। এমনকি তিনি এ কথাও বলেছেন, লেট ইট বি তাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। সে সময় তিনি ভ্যারাইটিকে বলেছিলেন যে ‘লেট ইট বি’কে মানুষ ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে। অনেকেই বলেছিল, এটি মন খারাপ করা একটা অনুভূতি দেয়। এর অবশ্য কারণও ছিল। তথ্যচিত্রটি এসেছিল বিটলস ভেঙে যাওয়ার পরপর। এছাড়া ১৬ মিলিমিটারে নির্মিত তথ্যচিত্রটি সত্তরের দশকের দর্শকের মধ্যে খুব একটা আলোড়ন তৈরি করতে পারেনি।

পিটার জ্যাকসন তার নতুন সংস্করণে পুরনো তথ্যচিত্রের কালার গ্রেডিং কিছুটা বদল করেছেন। এ সময়ের দর্শক চাহিদা তিনি জানেন। সে অনুসারে, নতুন কিছু সংযোজন করেছেন। তবে মাইকেলের কোনো মূল বিষয় তিনি বদল করেননি। তার টিমের সঙ্গে মিলে সংগ্রহ করেছিলেন পুরনো রিল এবং তা থেকেই কেটে ছেঁটে নতুন করে জুড়ে দিয়ে তিনি তৈরি করেছেন একটি নতুন কপি। এতে মাইকেল হগের পূর্ণ সমর্থন ছিল। ভ্যারাইটিকে হগ বলেন, ‘পিটার আমাকে সংস্কার করা কিছু ছবি দেখিয়েছিল। মূল থেকে তা ছিল অনেকটা ভিন্ন, কিন্তু আমি বলতে পারি লেট ইট বিকে সে আধুনিকভাবে উপস্থাপন করেছে।’

পিটার নিজে কাজটা করে বেশ আনন্দিত। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি যে লেট ইট বি আবার পূর্ণাঙ্গ রূপে দর্শকের সামনে আসতে যাচ্ছে। বহুদিন এ তথ্যচিত্র লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল। এবার একটি দারুণ কাজ তারা দেখতে পারবে।’

জ্যাকসন ও তার টিমের সংস্কার করা তথ্যচিত্রটি মুক্তি পাবে ওটিটিতে। ডিজনি প্লাস এরই মধ্যে লেট ইট বির প্রচার স্বত্ব নিয়েছে। আগামী ৮ মে থেকে ডিজনি প্লাসে স্ট্রিম হবে এ তথ্যচিত্র।

ভ্যারাইটি অবলম্বনে মাহমুদুর রহমান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন