ভারত সরকার প্রযুক্তি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে উল্লেখযোগ্য নীতি সংস্কার ও ব্যবস্থাপনাগত পরিবর্তন এনেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বৈশ্বিক শীর্ষ প্রযুক্তিপণ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিতি বেড়েছে দেশটিতে, যা কর্মসংস্থানে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে শুধু আইফোন নির্মাতা টেক জায়ান্ট অ্যাপলই সাড়ে চার লাখ ভারতীয়র কর্মসংস্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে। খবর ইকোনমিক টাইমস।
২০২১ সালের আগস্টে স্মার্টফোন শিল্পের জন্য প্রণোদনামূলক প্রডাকশন-লিংকড ইনসেন্টিভ (পিএলআই) স্কিম চালু করে ভারত সরকার। এর পর থেকে অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে সরাসরি দেড় লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এসব কর্মীর বয়স ১৯-২৪ বছর, যাদের বেশির ভাগই প্রথমবার শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছেন। সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি ৩২ মাসে ভারতে সাড়ে চার লাখের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।
অ্যাপল ইকোসিস্টেম বলতে বোঝায় বিস্তৃত এক নেটওয়ার্ক। সেখানে অ্যাপল, সরবরাহকারী, প্রস্তুতকারক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ককে বোঝায়, যা নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে জড়িত।
চুক্তিবদ্ধ নির্মাতা ও সরবরাহকারীদের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ভারতে অ্যাপল সরাসরি প্রায় তিন হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। এছাড়া মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম আইওএসের অ্যাপকে কেন্দ্র করে ১০ লাখের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন বাজার হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাপলের বিশেষ মনোযোগ পাচ্ছে ভারত। কারণ হিসেবে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো বাজারে ভোক্তা হ্রাসের কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা।
২০১৭ সালে ভারতে আইফোন উৎপাদন শুরু করে অ্যাপল। এরপর থেকে পিএলআই স্কিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়েছে তারা। এ স্কিমের অধীনে অ্যাপলের তিন সরবরাহকারী ফক্সকন, উইস্ট্রন ও পেগাট্রন ৭৭ হাজারেরও বেশি সরাসরি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। এর মধ্যে গত বছর উইস্ট্রনের ভারতীয় ইউনিট অধিগ্রহণ করেছে টাটা গ্রুপ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী জুন-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদনের সময়কালে আইফোন কারখানাগুলো আরো ১০ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োগ দেবে। সাধারণত সেপ্টেম্বরে নতুন আইফোন উন্মোচিত হয়, এ কারণে ওই সময় পরবর্তী প্রজন্মের মডেলের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বেড়ে যায়। ফেব্রুয়ারিতে ভারতে আইফোনের উৎপাদনমূল্য ১ লাখ কোটি রুপি ছাড়িয়েছে।
পিএলআই স্কিমের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক এগিয়ে অ্যাপলের উৎপাদন। এটি অ্যাপলকে ভারতের বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা করে তুলেছে। ভারতের ইকোসিস্টেম তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ ও হরিয়ানাজুড়ে বিস্তৃত। এছাড়া চীন থেকে উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য অংশ স্থানান্তর করতে ভারতীয় ইকোসিস্টেমের সম্প্রসারণ করছে আইফোন নির্মাতা।
অ্যাপল সরবরাহকারীদের মধ্যে নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে রয়েছে টাটা ইলেকট্রনিকস, সালকম্প টেকনোলজিস, ফক্সলিংক ও সানওডা। এছাড়া সাব-অ্যাসেম্বলি লাইনে যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী অ্যাভারি টেকনোলজিস, সিসিএল ইন্ডাস্ট্রিজ ও ফ্লেক্স কয়েক হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।
এ ক্রমবর্ধমান ইকোসিস্টেমে কর্মীদের জন্য উন্নয়নেও কাজ করছে অ্যাপল। সম্প্রতি ৫ কোটি ডলারের সাপ্লায়ার এমপ্লয়ি ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অংশ হিসেবে নারী স্বাস্থ্যবিষয়ক শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম চালু করেছে।