রমজানেও রেমিট্যান্স প্রবাহ শ্লথ

এক সপ্তাহে রিজার্ভ কমেছে ৫৩ কোটি ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

গত এক সপ্তাহে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ৫৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬) ২০ মার্চ দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৯৯ কোটি ডলার। সেখান থেকে কমে ২৭ মার্চ তা নেমে এসেছে ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন (১ হাজার ৯৪৫ কোটি) ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রিজার্ভের এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সোয়াপ পদ্ধতি চালু করার পর রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছিল। এখন পর্যন্ত সোয়াপের মাধ্যমে বাজার থেকে ১৭৬ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিপরীতে ব্যাংকগুলোয় তারল্য যুক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। বিদেশী ঋণ ও আমদানি দায় পরিশোধের কারণে এখনো রিজার্ভের ক্ষয় বন্ধ হচ্ছে না। দেশের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ঘাটতির পরিমাণও ক্রমাগত বাড়ছে।

বরাবরই ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রমজান মাসে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়। কিন্তু চলতি মার্চে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ শ্লথ। চলতি মাসের শুরু থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৪১ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের। এরপর গত সপ্তাহেও রেমিট্যান্স প্রবাহ তেমন একটা বাড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় দেশে ডলারের বাজার এখনো অস্থিতিশীল। ব্যাংকাররা বলছেন, খুচরা বাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলারের বিনিময় হার ব্যাংকের তুলনায় বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ ভালো। আশা করছি, রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে চলতি মাসে আরো বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে। দেশের রিজার্ভও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। আবার এ মুহূর্তে ডলারের বাজারও বেশ স্থিতিশীল।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণপ্রাপ্তির শর্ত হিসেবে রিজার্ভ গণনায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এভাবে রিজার্ভ গণনা শুরু হয়েছে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইয়ে। আইএমএফের সদস্য দেশগুলো ২০১২ সাল থেকেই ব্যালান্স অব পেমেন্টস ও ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম৬) অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাবায়ন করে আসছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক তা শুরু করতে সময় নিয়েছে প্রায় এক যুগ। বিপিএম৬ মূলনীতি অনুযায়ী হিসাব করা রিজার্ভও বাংলাদেশের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ নয়। নিট রিজার্ভ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে আইএমএফ থেকে নেয়া এসডিআরসহ স্বল্পমেয়াদি বেশকিছু দায় বাদ দিতে হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবায়ন পদ্ধতিতে ২৭ মার্চ দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে। এ হিসাব অনুযায়ী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২০২১ সালের আগস্টে। ওই সময় দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসীরা ১৪ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ।

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে রেকর্ড ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন বাংলাদেশী জীবিকার সন্ধানে অভিবাসী হয়েছেন। এর আগে ২০২২ সালে এ উদ্দেশ্যে বিদেশ যাওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। এ হিসাবে গত দুই বছরে কাজের উদ্দেশ্যে প্রবাসে গেছেন ২৪ লাখের বেশি বাংলাদেশী। যদিও দেশের রেমিট্যান্স সে অনুপাতে বাড়েনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন