একাত্তরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ

পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম থেকে স্বাধীন হলে তাদের হারানোর কিছু নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্বাধীন হলে পাকিস্তানের দুই উইংয়ের অর্থনীতির চেহারা কেমন হবে তা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এক বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ১৯৭১ সালের মে মাসে প্রস্তুতকৃত ওই প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, সাতচল্লিশের দেশভাগের পর দুই উইংয়ের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠলেও এ থেকে শুধু পশ্চিম পাকিস্তানই লাভবান হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হলে পাকিস্তানের দুই অংশেই নানা ধরনের অর্থনৈতিক বিপত্তির শঙ্কা রয়েছে। তবে পশ্চিমের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তুলনামূলক বেশি। অর্থনীতির অসম বণ্টনে পিছিয়ে পড়া এবং সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের পর পাকিস্তান সরকারের বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া পূর্বের জনসাধারণের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দৃঢ় করে তুলেছে। পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দারা মনে করছে, তাদের এখন পশ্চিম থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত। স্বাধীন দেশ হিসেবে তারা ভালো করতে না পারলেও অন্তত এর চেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়বে না। 

তৎকালীন মার্কিন সরকারের পর্যবেক্ষণ ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতায় দুই অংশেই অর্থনৈতিক বিপত্তি দেখা দেবে। তবে পশ্চিমের ক্ষেত্রে এর প্রভাব হবে তুলনামূলক বেশি। তাদের ওই বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, পশ্চিম পাকিস্তানে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর; বিশেষ করে বস্ত্র ও ভোক্তাপণ্যের প্রধানতম বাজার হলো পূর্ব পাকিস্তান। পূর্বাংশ আলাদা হয়ে গেলে পশ্চিম পাকিস্তান সে বাজারটি হারিয়ে ফেলবে। বিশ্ববাজারে পণ্যগুলোর রফতানি বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও তা আসন্ন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যথেষ্ট নয়। পাকিস্তানের পূর্বাংশ আলাদা হয়ে গেলে বাজার হারিয়ে পশ্চিমাংশের শিল্পোৎপাদন ও কর্মসংস্থান কমে যাবে। মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দায় পড়বে পশ্চিম পাকিস্তান। এর সঙ্গে সঙ্গে বিপত্তি বাড়বে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য নিয়ে। শিল্প খাতের উন্নয়নসহ সার্বিক অর্থনীতিতে বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা বাড়বে। রফতানি বাণিজ্য বাড়ানোর তাগিদে রুপির অবমূল্যায়নে বাধ্য হবে পশ্চিম পাকিস্তান। উপরন্তু পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের অধিকাংশ দায় বর্তাবে পশ্চিমাংশের ওপর। এ অবস্থায় ঋণখেলাপি হওয়া এড়াতে দেশটির জন্য বৈদেশিক ঋণ মওকুফ করিয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে।

স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক চিত্র সম্পর্কে মার্কিন সরকারের প্রক্ষেপণ ছিল, স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানও বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য নিয়ে বিপাকে পড়বে। তবে এর মাত্রা হবে পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে কম। আবার দেশটিতে বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা খাদ্য, প্রকল্প ও কারিগরি সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যের শর্তগুলো হবে আরো অনুকূল ও নমনীয়। পরিবহন খরচও কমবে। এতে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। বরং এর সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগও বাড়বে। তবে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বড় একটি সংকট হয়ে দেখা দেবে উদ্যোক্তা ও দক্ষ ব্যবস্থাপকের অভাব। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব ও বাড়তি জনসংখ্যার চাপ পূর্ব পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধিকে দীর্ঘমেয়াদে চাপে ফেলবে। 

মার্কিন একটি সরকারি সংস্থার তৎকালীন পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, যুদ্ধ শুরুর কারণে পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে আন্তঃউইং বাণিজ্য থমকে গেছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাট রফতানি এক প্রকার বন্ধ। এতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমেছে পশ্চিমের। আবার পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিমাংশের টেক্সটাইল শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের প্রবাহও এখন থমকে গেছে। যদিও পূর্ব পাকিস্তানই এ শিল্পের বড় বাজার। পূর্বাংশ স্বাধীন হলে পাকিস্তানের উভয় উইংয়ের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। পূর্ব পাকিস্তানের বাজারে প্রবেশাধিকার হারাবে পশ্চিম পাকিস্তান। এর সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমকে পণ্য আমদানির নতুন উৎসও খুঁজতে হবে। দুই উইংয়ের ১৯৭০ সালের বাণিজ্য পরিসংখ্যানেও পশ্চিমের অর্থনীতিতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার বড় প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্ট। বরাবরের মতো ওই বছরেও পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে পশ্চিম পাকিস্তান। ১৯৭০ সালে উভয়াংশের মধ্যে বাণিজ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্বৃত্ত ছিল ৭৮ মিলিয়ন ডলার। যেখানে একই বছরে পশ্চিম পাকিস্তানের মোট বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ৩৫২ মিলিয়ন ডলার। 

স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম পশ্চিম পাকিস্তানের রফতানি বাণিজ্যকে ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করবে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, পশ্চিম পাকিস্তান পূর্বের বিকল্প বাজার খুঁজে নাও পেতে পারে। ১৯৭০ সালেও পূর্ব পাকিস্তানে মোট ১৭৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে পশ্চিম পাকিস্তান, যা গোটা বিশ্বের অন্যান্য দেশে মোট রফতানির অর্ধেক। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্বে প্রধানত খাদ্য, পোশাক ও তুলা রফতানি করা হয়। এসব পণ্য অন্যান্য দেশে রফতানি করা হয় ঠিকই। কিন্তু পূর্বের বাজারে যে পণ্য পাঠানো হতো তার বহুলাংশই পরে বহির্বিশ্বে পাঠানো সম্ভব হবে না। বিশেষ করে খাদ্য ও টেক্সটাইল পণ্য। কারণ পূর্ব পাকিস্তানে যেসব খাদ্য ও টেক্সটাইল পণ্য পাঠানো হয় তা মূলত নিম্নমানের। এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানে পাদুকা, ওষুধ, সিমেন্ট, যন্ত্রপাতিসহ আর যেসব পণ্য রফতানি করা হয়, সেগুলোরও বহির্বিশ্বে রফতানি করে প্রতিযোগিতায় খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না পশ্চিম পাকিস্তান। এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের বাণিজ্য ঘাটতিও আরো ব্যাপক মাত্রায় বাড়বে। 

প্রক্ষেপণে বলা হয়, বড় বাজার হারানোর ধারাবাহিকতায় পশ্চিম পাকিস্তান মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়বে। শুধু তুলা শিল্পেরই বাজার সংকোচন হবে এক-চতুর্থাংশ। আর এতে উৎপাদন সংকুচিত হবে দুই-পঞ্চমাংশ। এ ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি হবে, কারণ পূর্বের বাজারে এ শিল্পের পণ্য তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি হয়। আর পশ্চিম পাকিস্তানের মোট শ্রমশক্তিতে শিল্পটির অবদান বিবেচনায় বলা যায়, পূর্ব পাকিস্তানের বাজার হারালে পশ্চিমের শিল্প খাতে মোট শ্রমশক্তির ১০ শতাংশই কর্মহীন হয়ে পড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাপক মাত্রায়। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর সেখান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি উদ্যোক্তারা ফিরে এলেও তাদের প্রত্যাবাসিত পুঁজি কিছু সময়ের জন্য অলস ফেলে রাখতে হবে। আবার আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হবে পশ্চিম পাকিস্তানের কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থাপনায়ও। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাক্কালে পাকিস্তানে রুপির বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয়েছিল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র মনে করছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলে পাকিস্তানের পক্ষে রুপির অবমূল্যায়ন ঘটানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, একা হয়ে গেলে পশ্চিম পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বিপত্তি, মন্দা ও বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা বাড়বে। এ অবস্থায় রফতানি বাড়াতে প্রায় শতভাগ অতিমূল্যায়িত রুপির অবমূল্যায়ন ঘটাতেই হবে। একই সঙ্গে বিদেশী সহায়তা ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং বৈদেশিক ঋণ খেলাপি হওয়া এড়ানো সম্ভব হবে না।  

এতে আরো বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা পাকিস্তানের তৎকালীন দুই অংশের অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করছে বিদেশী ঋণ ও বৈদেশিক মুদ্রার বণ্টনের ওপর। সেদিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানও কিছুটা বিপত্তিতে পড়তে পারে। কিন্তু স্বাধীনতা পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরো সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হবে। আবার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য আনা হতো তা আরো সুলভে ভারত থেকে সংগ্রহ করা যাবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাটের বাজার সম্প্রসারণের সম্ভাবনাও তৈরি হবে। 

ওই সময় স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তানের সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত করা হয় খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বর্ধিত জনসংখ্যার চাপকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রক্ষেপণে খাদ্য ঘাটতির পাশাপাশি পশ্চিম পাকিস্তানি উদ্যোক্তাদের প্রস্থানকেও এখানকার শিল্প ও বাণিজ্য খাতকে বিপাকে ফেলে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার আগে পশ্চিম পাকিস্তানে নগরায়ণ হয়েছিল তুলনামূলক বেশি। দেশভাগের সময় ভারত থেকে আসা উদ্যোক্তারা বসবাস করছিলেন প্রধানত পশ্চিম পাকিস্তানে। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি ছিল পুরোপুরি কৃষিনির্ভর। জনসংখ্যাও বেশি। এখানকার উদ্যোক্তা শ্রেণীটির বড় একটি অংশ দেশভাগের সময় ভারতে চলে গিয়েছেন। ফলে পুঁজির বিকাশও তেমন একটা হয়নি। এসব বিষয় উভয়াংশের বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে বৈষম্যকে বেশ প্রকট করে তুলেছিল বলে মার্কিন সরকারের পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণে দেখা যায়।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় পাকিস্তানের দুই উইংয়ের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে ওয়াশিংটনের মূল্যায়ন ছিল, সাতচল্লিশের দেশভাগের আগে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তেমন একটা ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানের জন্মের পর দুই উইংয়ের মধ্যে পরস্পর বাণিজ্যিক নির্ভরতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। তবে এ আন্তঃউইং বাণিজ্য থেকে বরাবরই পশ্চিম পাকিস্তান লাভবান হয়েছে বেশি। এর সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়েছে দুই উইংয়ে জনগণের জীবনমানের ব্যবধানও। আবার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিমের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নের ওপরই নির্ভর করতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ অর্থায়নও ষাটের দশকের আগে তেমন একটা মেলেনি। পূর্বাংশ কৃষিনির্ভর হলেও ষাটের দশকের শেষভাগে ঘটে যাওয়া ‘‌সবুজ বিপ্লবের’ একক সুবিধাভোগী হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তান। দৃশ্যমানভাবেই এর অর্থনৈতিক সফলতার সুবিধাভোগীও ছিল শুধু পশ্চিমাংশ। পাকিস্তানের জন্মের সময়ে দুই অংশের জনগণের মাথাপিছু আয়ে তেমন কোনো ফারাক ছিল না। কিন্তু এর দুই দশকের মধ্যেই পশ্চিমাংশের মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় পূর্বাংশের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশিতে। সত্তরের নভেম্বরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের (ভোলা সাইক্লোন) পর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এর প্রতিক্রিয়াও এসেছে অনেক দেরিতে। 

বিষয়গুলো পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দৃঢ় করে তুলেছে বলে মার্কিন সরকারের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। এতে বলা হয়, পূর্বাংশের বাসিন্দাদের মধ্যে কার্যত সবাই একটি বিষয়ে নিশ্চিত যে তাদের এখন পশ্চিমাংশ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত। তারা মনে করে, স্বাধীন দেশ হিসেবে তারা ভালো করতে না পারলেও অন্তত এর চেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়বে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন