ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

স্থাপত্যশৈলীতে যে কারণে অনন্য

ফিচার প্রতিবেদক

ছবি: কাজী সালাহউদ্দীন রাজু

পরিবেশগত ও স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নতুন ক্যাম্পাস বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ক্রস ভেন্টিলেশন, অ্যারোডায়নামিক ফিন, হাইব্রিড কুলিং সিস্টেম, ওয়াটার ও সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, রেইন চেইনসহ ডায়নামিক অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে ভবনের পরতে পরতে। 

হাইব্রিড কুলিং সিস্টেম: হাইব্রিড কুলিং সিস্টেম একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এখানে এয়ারকন্ডিশনার ও ফ্যান একসঙ্গে চালিয়ে তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমে এয়ারকন্ডিশনকে প্রায় ২৭ বা ২৮ ডিগ্রি পয়েন্টে সেন্ট করা হয়। এরপর এ বাতাসকে বড় বড় ফ্যানের মাধ্যমে জোরে প্রবাহিত করা হয়। এর ফলে বাতাস গায়ে লাগলে ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে এ প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি রাখা হয়েছে। এ ভবনের বহির্ভাগটা তাপমাত্রা এবং শব্দ প্রতিরোধী করার জন্য জানালায় একাধিক স্তরের শক্তিশালী, পুরু ও স্থিতিস্থাপক অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমে গ্লেজিং করা হয়েছে। 

ক্রস ভেন্টিলেশন ও অ্যারোডায়নামিক ফিন: ক্রস ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে ইউনিভার্সিটির ভবনের প্রতিটি জায়গায় বিশুদ্ধ বাতাস পৌঁছে। এটি এমন এক পদ্ধতি যার সাহায্যে বাতাস খোলা জায়গা বা জানালা দিয়ে যেখানে বাতাসের চাপ কম সেই পর্যন্ত যাওয়া-আসা করে। এ পদ্ধতিতে বায়ুর গুণমান বজায় থাকে এবং ভবনের তাপমাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে। ফলে দূষিত বাতাস ভবন থেকে বের হয়ে যায়।

ওয়াটার ও সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট: ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পানিকে পরিশোধনের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা যায়। এখানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহারের নির্ভরশীলতা কমে। বায়োটোপ সিস্টেম নামে উদ্ভাবনী একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে উদ্ভিদ ও গাছপালার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ এবং জলপ্রবাহকে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ করা হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপণের জন্যও এ পানি ব্যবহার করা হবে। একটি অ্যাডভান্সড সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে। অতিরিক্ত বর্জ্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জৈব সার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে।

সৌরশক্তি উৎপাদন: এ ভবনের বিশালাকার ছাদে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। এখান থেকে ১  দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উপাদন করা হবে, যা এ ভবনের ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাবে। প্রথমে এ সোলার প্যানেল থেকে ১ মেগাওয়াট সৌরশক্তি উৎপাদন হতো। সম্প্রতি আরো ৪০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ এখান থেকে উৎপাদনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ইউনিভার্সাল অ্যাকসেসিবিলিটি: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা যেন ক্যাম্পাসের সর্বত্র চলাচল করতে পারে সেজন্য লিফট, এস্কেলেটর, টয়লেট, সিঁড়িসহ সবখানেই বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। 

রেইন চেইন ও বায়োটোপ: ক্যাম্পাসের ভবনে রয়েছে অসংখ্য রেইন চেইন। এগুলো দিয়ে ভবনের ভেতরে থাকা গাছপালাগুলোয় সেচ দেয়া হয়। রেইন চেইনগুলোর মাধ্যমে পানি পরিশোধনসহ বৃষ্টির পানিকে জলাধার পর্যন্ত পৌঁছানো যায়। এছাড়া ভবনে বায়োটপ নামে একটি উদ্ভাবনী সিস্টেম রয়েছে। অসংখ্য রেইন চেইনের মাধ্যমে পানি জলাধার পর্যন্ত এসে পৌঁছে। এ জলাধারে বালি, পাথর ও ক্ষুদ্র উদ্ভিদের কারণে পানি পরিশ্রুত হয়ে রিজার্ভারে জমা করে, যা পরবর্তী সময়ে অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে।

সবুজ চাদর: ভবনের গায়ে সবুজ চাদরের মতো লেগে থাকা গাছগুলো ভবনের তাপমাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ সবুজ গাছগুলো অক্সিজেন সরবরাহ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করছে, যার ফলে ভবনের ভেতরের বাতাস থাকছে বিশুদ্ধ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন