ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

যেভাবে গড়ে উঠল স্বপ্নের ক্যাম্পাস

ছবি: ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

২০০১ সালে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একটা স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ক্যাম্পাসটা কোথায় হবে এটা নিয়ে স্যার ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে আমার কয়েকবার আলোচনা হয়। স্যার ফজলেই মেরুল বাড্ডার এ জায়গাকে নতুন ক্যাম্পাসের জন্য নির্বাচন করেন। এখানে ক্যাম্পাস বানানোর পেছনে আরেকটা কারণ হলো এত বড় জমি একসঙ্গে ঢাকায় পাওয়া মুশকিল ছিল এবং তিনি ঢাকায়ই ক্যাম্পাসটা বানাতে চেয়েছিলেন।

২০০৯ সালে স্যার ফজলে হাসান ক্যাম্পাসটা কীভাবে হবে, কে বানাবে এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। উনি চাইতেন এ ক্যাম্পাস বিশ্বমানের এবং অনুকরণীয় একটা ক্যাম্পাস হবে, যেটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্ব করতে পারেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এ ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পায় সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফার্ম WOHA। স্যার আবেদ চেয়েছিলেন একটা পরিবেশবান্ধব ভবন বানাতে। আর WOHA এ ধরনের ভবন নির্মাণ করে। স্যার ফজলে বাংলাদেশের কিংবদন্তি আর্কিটেক্ট বশিরুল হককে এ প্রজেক্টের অ্যাডভাইজার হিসেবে নেন। 

এরপর শুরু হলো ক্যাম্পাসের ফাংশনাল প্রোগ্রামে কী কী থাকবে সেগুলো ঠিক করা। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, চেয়ারপারসনসহ দায়িত্বশীলদের নিয়ে ফাংশনাল প্রোগ্রামের খসড়া ঠিক করে ফেলি এবং এরপর সিঙ্গাপুরে WOHA -এর অফিসে যাই। সেখানে ক্যাম্পাসটা কেমন হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হয় এবং তারা একটি স্কিম দাঁড় করায়। এরপর ঢাকায় এসে স্যার ফজলের সামনে তারা একটা প্রেজেন্টেশন দেয়। স্যার ফজলের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল উনি সবসময় বিশেষজ্ঞদের মতকে শ্রদ্ধা করতেন। উনি খুব বেশি কিছু বললেন না, শুধু বললেন আমাদের এমন একটা ক্যাম্পাস চাই যা পরিবেশ সংরক্ষণে হবে একটা নিদর্শন। WOHA এরপর বেশকিছু বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে এ প্রজেক্টে যুক্ত করে। এনার্জি কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করে ট্রান্সসোলার নামে একটি জার্মান প্রতিষ্ঠান। সৌরশক্তি, ভেন্টিলেশনসহ পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন উপাদান নিয়ে তারা কাজ করে। 

এ বিল্ডিংয়ের স্ট্রাকচার কনসেপ্ট বাংলাদেশে প্রথম। এখানকার ফাউন্ডেশনে ডায়াফ্রাম ওয়াল নামে একটা বিষয় আছে, যা বাংলাদেশে এর আগে কোথাও হয়নি। আমরা এজন্য বিল্ডিংয়ের স্ট্রাকচার নিয়ে বাংলাদেশী ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারসহ কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলি। এরপর আমরা WOHA-এর সঙ্গে কথা বলি। তাদের সহায়তায় সিঙ্গাপুরের ওয়েব স্ট্রাকচার্স নামে সুপ্রতিষ্ঠিত একটা ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের ইরানিয়ান-ইতালিয়ান একজন বিখ্যাত স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার এ বিল্ডিংয়ের স্ট্রাকচার করেছেন। 

অনেকগুলো কারণে এ ক্যাম্পাস অনন্য। আমরা আমাদের দেশে বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে দক্ষিণমুখী করে বানাই। আমাদের এ বিল্ডিং এর উল্টো। এখানে বাতাসকে ভবনের ভেতরে ব্লকগুলোর মাঝখানের জায়গা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে সব পাশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা নতুন কনসেপ্ট। একটা গ্রিন বিল্ডিং। এ ভবনে বড় বড় গাছের পরিকল্পনা আছে। অন্য সব বড় ক্যাম্পাসের মতো আমাদের ক্যাম্পাসে অনেক সবুজ রয়েছে। পার্থক্য হলো সেগুলোয় গাছপালা আনুভূমিকভাবে আছে আর আমাদের এখানে সেগুলো উল্লম্ব বা ভার্টিক্যালি বিনস্ত। ২০২৩ সালে এসে আমরা আমাদের এ স্বপ্নের ক্যাম্পাসের নির্মাণ শেষ করতে পেরেছি। শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও খুবই খুশি। দুর্ভাগ্যবশত স্যার ফজলে ভবনটি দেখে যেতে পারেননি। স্যার ফজলে এ ভবন দেখে যেতে পারলে খুবই খুশি হতেন। স্যার ফজলের আদর্শ আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। তার চেতনা আর রেখে যাওয়া কীর্তি আমাদের মাঝে থাকবে অনন্তকাল। 

অধ্যাপক ফুয়াদ হাসান মল্লিক

ডিন, স্কুল অব আর্কিটেকচার অ্যান্ড ডিজাইন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন