পাচার হচ্ছে ভারতে

সিলেটের বাজারে হঠাৎ বেড়েছে রসুনের চাহিদা

নূর আহমাদ, সিলেট

চীন থেকে বাংলাদেশে আনা রসুন অধিক মুনাফার লোভে পাচার হচ্ছে ভারতে ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

চাহিদা থাকলেও চীনের রসুন ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অন্যদিকে চীনের রসুনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সারা দেশের মতো সিলেটেও। চাহিদা থাকায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ রসুন আসছে সিলেটে। এর পরও চাহিদা শেষ হচ্ছে না মসলাজাতীয় পণ্যটির। অন্যদিকে পাইকারি বাজার থেকেও রাতারাতি উধাও হয়ে যাচ্ছে সিলেটে আসা রসুন। লাভ হলেও হঠাৎ রসুনের চাহিদা বাড়ায় বিস্মিত হয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, সিলেটের বৃহৎ পাইকারি বাজার কালিঘাটে রসুনগুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে।

সিলেটের সীমান্ত এলাকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ভারতের মেঘালয়, আসামসহ আশপাশ এলাকায় রসুনের দাম তুলনামূলক বেশি। ফলে চীন থেকে বাংলাদেশে আনা রসুন অধিক মুনাফার লোভে চোরাইপথে পাচার হচ্ছে। সিলেটের প্রায় সব সীমান্ত দিয়ে দিন-রাত সমানতালে এসব পণ্য আদান-প্রদান হচ্ছে।

জানা গেছে, পাচারকারীরা চীন থেকে আমদানি করা রসুন কালিঘাট থেকে ১৬০-১৬৫ টাকা কেজি দরে কেনে। ভারতের চোরাকারবারিদের কাছে তা বিক্রি হয় ১৮০ টাকা কেজি। পরে ভারতের স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৭০ টাকা কেজি পর্যন্ত।

ব্যবসায়ী সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন সিলেট থেকে দুই-আড়াই হাজার বস্তা রসুন পাচার হচ্ছে। তবে প্রকৃত পরিমাণ হিসাবের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি, সুনারহাট, পান্তুমাই (পাদুয়া), সংগ্রাম, তামাবিল, জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল, জৈন্তাপুর রাজবাড়ী, ডিবির হাওর, মিনাটিলা, শ্রীপুর, কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া-নুনছড়া, সুরিঘাটসহ জকিগঞ্জ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক স্পট দিয়ে এসব পণ্য আদান-প্রদান হচ্ছে।

ভারত থেকে চোরাইপথে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশেরও প্রমাণ মিলেছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় তাহিরপুর উপজেলায় অবৈধভাবে আসা ভারতীয় ১২০ বস্তা পেঁয়াজসহ দুজনকে আটক করে তাহিরপুর থানা পুলিশ। তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কে অভিযান চালিয়ে হাজার ৮০০ কেজি ভারতীয় পেঁয়াজসহ একটি মিনি ট্রাক জব্দ করা হয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, অতীতে কোনোদিন এত রসুন বিক্রি হয়নি। সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয়ায় প্রচুর পরিমাণ রসুন ভারতে যাচ্ছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ শুল্ক আদায় ব্যাহত হচ্ছে।

কালিঘাট কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সভাপতি আব্দুল গাফফার মিন্টু বলেন, ‘সরকার ডলার সংকটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে এলসিতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। বিকল্প পথে পেঁয়াজ আসায় বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালিঘাটের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রসুন পাচারের বিষয়টি দীর্ঘদিনের। তবে সম্প্রতি প্রবণতা বেড়েছে। কারণ বর্তমানে এলসির পেঁয়াজ সিলেটে আমদানি বন্ধ রয়েছে।

সীমান্তবর্তী থানা কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সর্দার বলেন, ‘চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। দফায় দফায় চিনিসহ অন্যান্য পণ্য জব্দ হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির এক কর্মকর্তা জানান, সিলেটের সব সীমান্তে তাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। এর পরও তাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখে চোরাকারবারিরা। তাদের স্থান পরিবর্তনের সুযোগ চোরাকারবারিরা কাজে লাগাচ্ছে বলে মন্তব্য তার।

সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাহমিন আহমেদ জানান, রসুন যাওয়া কিংবা পেঁয়াজ আসা, এর পেছনে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীদের চেয়ে অব্যবসায়ীরা। এটি নিয়ন্ত্রণ করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন