এইচএসসির ফল প্রকাশ

পাসের হার কমেছে ৭.৩১ শতাংশ, জিপিএ ৫ নেমেছে প্রায় অর্ধেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর নটর ডেম কলেজে গতকাল এক শিক্ষার্থীকে অভিভাবকের স্নেহের পরশ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এবার গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪। গত বছর এ হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর পাসের হার কমেছে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। একই সঙ্গে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে এবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। 

গণভবনে গতকাল সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা।

এরপর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। এ বছর দেশের নয়টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ পরীক্ষার্থী এইচএসসি, আলিম ও ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেন। এদের মধ্যে পাস করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন। সে অনুযায়ী গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪, যা গত বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কম। 

এছাড়া চলতি বছর জিপিএ ৫ পেয়েছেন মোট ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। গত বছর জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২। সে হিসেবে এবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কমেছে ৮৩ হাজার ৬৮৭ জন।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবারো ছেলেদের তুলনায় পাসের দিক দিয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৩, উত্তীর্ণ হয়েছে ৫ লাখ ২৮ হাজার ৯১৯ জন; পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭৬ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪৩ হাজার ২৩০ জন। আর ছাত্রী ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯২ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৩ জন। পাসের হার ৮০ দশমিক ৫৭ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৩৬৫ জন। সে হিসেবে ছাত্রদের তুলনায় ৬ হাজার ১৩৫ ছাত্রী বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছেন।

বোর্ডভিত্তিক পাসের হারে এবারো এগিয়ে রয়েছে বরিশাল এবং পিছিয়ে যশোর। এ দুই বোর্ডের পাসের হার যথাক্রমে ৮০ দশমিক ৬৫ ও ৬৯ দশমিক ৮৮। এছাড়া ঢাকা বোর্ডে পাস করেছেন ৭৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭৮ দশমিক ৪৬, কুমিল্লায় ৭৫ দশমিক ৩৯, চট্টগ্রামে ৭৪ দশমিক ৪৫, দিনাজপুরে ৭৪ দশমিক ৪৮, সিলেটে ৭১ দশমিক ৬২ ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৯০ দশমিক ৭৫ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।

গত বছরের তুলনায় এবার শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ১ হাজার ৩৩০টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ পরীক্ষার্থীই পাস করেছিলেন। চলতি বছর ৯৫৩টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এছাড়া পরীক্ষায় অংশ নেয়া মোট ৯ হাজার ১৮৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এবার ৪২টি প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেননি। 

গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘গত বছরের বিষয় আর এবারের বিষয় এক নয়। এ বছর সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে, তাই পাসের হার ও জিপিএ ৫-এর সংখ্যা কমতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘তুলনা করতে হবে করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে। সে হিসেবে ফলাফল কিছুটা ভালো হয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রসঙ্গে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের। তবে সেটি যদি সম্ভব না হয় তাহলে গত বছরের মতোই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’ 

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি মূল্যবোধ তৈরি না হয়, তাহলে শুধু বেশি নম্বর পেয়ে কী হবে। মানবিক গুণে গুণান্বিত হও, চারপাশে তাকাও, মানুষকে ভালোবাসো। নীতিনৈতিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠো, স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত হও, নিঃস্বার্থচিত্তে মানবকল্যাণে নিবেদিত হও।’

এর আগে সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই আমাদের ছেলে-মেয়েরা একটা উন্নত জীবন পাক, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোক এবং সুন্দরভাবে তারা বেড়ে উঠুক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিশিক্ষার মাধ্যমে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি, তারই সৈনিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলুক।’

গত ১৭ আগস্ট দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চট্টগ্রাম, মাদ্রাসা ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা ২৭ আগস্ট শুরু হয়। এবার পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী একটি ছাড়া সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়েছে। শুধু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) পরীক্ষা শেষ সময়ে এসে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন