রাজৈর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শয্যা বাড়লেও সংকট কাটেনি

রিপন চন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর

মাদারীপুরের রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগী ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা পরিষদের পাশেই ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করা হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শুরুতে ১০ শয্যা থাকলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী ৩১ শয্যা করা হয়। সর্বশেষ ২০১০ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে শয্যা বাড়লেও নানামুখী সংকট রয়ে গেছে স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানটিতে। চিকিৎসকের ২১টি পদ থাকলেও ছয়টিতে জনবল নেই। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে আরো ৫০টি পদ শূন্য রয়েছে। ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে বিকল একমাত্র জেনারেটর। এক্স-রে যন্ত্রটিও তিন মাসের বেশি সময় ধরে নষ্ট। ডিজিটাল আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি যন্ত্রটিও সবসময় চালু থাকে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞের পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্সের পাঁচটি পদের মধ্যে দুটি শূন্য। স্বাস্থ্য সহকারী, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল ও ফিজিও), ফার্মাসিস্ট, উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা, প্রধান সহকারী, ক্যাশিয়ার, সহকারী নার্স, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, উপস্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ আরো ৫০টি পদ শূন্য রয়েছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পুরনো ভবনের সিঁড়ির নিচে পড়ে রয়েছে জেনারেটরটি। নতুন ভবনের ১৩১ নম্বর কক্ষে এক্স-রে যন্ত্রটি বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। হাসপাতালটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় নারী এবং পুরুষের আলাদা ওয়ার্ড। এর মধ্যে পুরুষের জন্য ১৬টি শয্যা এবং নারী ও শিশুর জন্য রয়েছে ৩৪টি শয্যা। হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছে ৬৬ জন। এর মধ্যে ৩০ জনই ডায়রিয়া ও ১৩ জন অন্যান্য রোগে আক্রান্ত। শয্যা খালি না থাকায় ১৬ জন রোগীর ঠাঁই হয়েছে মেঝে ও বারান্দায়। হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে স্যাঁতসেঁতে ও অপরিচ্ছন্ন থাকায় মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। জেনারেটর নষ্ট থাকায় লোডশেডিং হলেই দুর্ভোগের শিকার হয় ভর্তি রোগীরা।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু মুনিয়া আক্তারকে শুক্রবার রাতে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। শিশু ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় অসুস্থ শিশুটির ঠাঁই হয় হাসপাতালের খোলা বারান্দায়। শিশুটির মা আলেয়া আক্তার বলেন, ‘মেয়ে মাথা তুলতে পারছে না, খুব অসুস্থ। হাসপাতালে নার্সরা সেবা ভালো দিলেও একটা ওষুধও তারা দেয়নি। সব বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশটাও ভালো না। মশা-মাছির উপদ্রবে টেকা যাচ্ছে না।’

মুনিয়ার পাশেই ঠাঁই হয়েছে ডায়রিয়া আক্তান্ত ছয় মাসের শিশু আলিফের। শিশুটির মা রেনু বেগম বলেন, ‘এ অবস্থায় কী আর বলব। আমরা গরিব মানুষ। সরকারি হাসপাতালের এই পরিবেশ বাধ্য হয়েই মানতে হচ্ছে।’

হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন দুর্ঘটনায় আহত সজীব হাওলাদার (২৫)। সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তার বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ছেলেটার অবস্থা বেশি ভালো না। কোনো শয্যা খালি নেই। মেঝেতে জায়গা হয়েছে। কাকে কি বলব, সেই লোকই খুঁজে পাই না।’

নার্সিং সুপারভাইজার বিভা রানী বাড়ৈ বলেন, ‘রোগীর চাপ বেশি থাকায় মেঝে ও বারান্দায় জায়গা করে দেয়া হচ্ছে। শয্যার জন্য রোগীরা ঝামেলা করে, তাদের বোঝাতে হয়। রোগীরা পরিস্থিতি না বুঝে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তবু আমরা চেষ্টা করি ভালো সেবা দিতে।’

এ ব্যাপারে হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা অপূর্ব মল্লিক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক, কর্মচারী ও শয্যা সংকট রয়েছে। এ কারণে সেবা দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে সংকট সমাধানে আমরা কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সব সংকট নিরসন হবে। হাসপাতালে যেসব ওষুধ রয়েছে তা আমরা রোগীদের সরবরাহ করছি। যন্ত্রপাতির মধ্যে যেগুলোয় সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা মেরামতের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন