এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মালিকানা নিয়ে ঠিকাদারদের বিরোধ, কাজে ধীরগতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে নির্মাণ হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আর এ নির্মাণকাজে বেসরকারি অংশীদার ‘ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেড’। কোম্পানিটির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক থাইল্যান্ডভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই। অবশিষ্ট ৪৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক চীনের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসআই ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানির মালিকানা নিয়ে ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে দুই চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারদের এ বিরোধে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ এখন ধীর হয়ে পড়েছে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১১ সালে। প্রকল্পটিতে বিনিয়োগকারী হিসেবে এগিয়ে আসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (ইতাল-থাই)। শুরু থেকেই প্রকল্পের অর্থের সংস্থান করতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে চায়না এক্সিম ব্যাংক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নার (আইসিবিসি) কাছ থেকে ৮৬১ মিলিয়ন ডলার ঋণ জোগাড় করে ইতাল-থাই। বিনিময়ে চীনের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানির ৪৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনের দুই ব্যাংকের সঙ্গে ইতাল-থাইয়ের চুক্তিতে বলা হয়েছিল, কোম্পানিটি যদি সুদের কোনো কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে ঋণ চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। কোম্পানির শেয়ার চীনের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের সুযোগও রাখা হয় চুক্তির শর্তে। এর মধ্যে একটি কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি। এর জেরে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রকল্পটির জন্য ঋণছাড় বন্ধ করে দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক অব চায়না ও আইসিবিসি। ঋণছাড় অব্যাহত রাখার জন্য ব্যাংক দুটি ইতাল-থাইয়ের হাতে থাকা সিংহভাগ শেয়ার সিএসআই ও সিনোহাইড্রোর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছে।

সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনের দুই ব্যাংকের শর্ত মেনে নিয়ে শেয়ার হস্তান্তর করলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ইতাল-থাইয়ের বলতে গেলে কিছুই থাকবে না। এজন্য বাংলাদেশের আদালতে এক্সিম ব্যাংক অব চায়না ও আইসিবিসির সিদ্ধান্তটি স্থগিতের জন্য আবেদন করে ইতাল-থাই। ১২ মে এ আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। একই বিষয় নিয়ে ইতাল-থাই ও চীনের ঠিকাদারদের মধ্যে সিঙ্গাপুরের একটি আদালতেও মামলা চলছে। 

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানির মালিকানা নিয়ে ঠিকাদারদের চলমান বিরোধের কারণে প্রকল্পটির নির্মাণকাজে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। অর্থাভাবে বিভিন্ন পয়েন্টে প্রকল্পের কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে গতকাল মগবাজার, মালিবাগ, কমলাপুর এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ বন্ধ দেখা গেছে।

যদিও কাজ বন্ধ থাকার প্রভাব সার্বিকভাবে প্রকল্পটির ওপর পড়বে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক এএইচএমএস আকতার। এ প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ‘ঠিকাদারদের মধ্যকার চলমান বিরোধ দ্রুতই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। চার-পাঁচ মাস ধরে কাজ কিন্তু একবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। সীমিত পরিসরে কাজ হয়েছে। এ প্রকল্পের ঠিকাদাররা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। তারা চাইলে বাড়তি জনবল দিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করে অগ্রগতি এগিয়ে নিতে পারবে। আমরা মনে করি, এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের জটিলতা হবে না।’

এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে খরচ হচ্ছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। প্রথম ধাপে বিমানবন্দর-বনানী অংশের অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপ বনানী-মগবাজার অংশের অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। শেষ ধাপ মগবাজার-কুতুবখালী অংশের অগ্রগতি ১২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।

জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ২০২৫ সালের শুরুর দিকে পুরো কাজ শেষ হবে। তবে ঠিকাদারদের মধ্যকার চলমান বিরোধ প্রকল্প বাস্তবায়ন আরো বিলম্বিত করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন